দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় একমাত্র দ্বীপজেলা ভোলায় নতুন করে আরো সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকার উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। প্রায় ৫ দশমিক ১০৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাসের মজুদ রয়েছে, যা বাংলাদেশে আগামী ৫ বছরের গ্যাসের চাহিদা পূরণে সক্ষম।
ভোলার শাহবাজপুর ও ইলিশায় ২ দশমিক ৪২৩ টিসিএফ এবং চর ফ্যাশনে ২ দশমিক ৬৮৬ টিসিএফ গ্যাস মজুদ রয়েছে, যা একটি গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করে পূরণ করা হচ্ছে। কিন্তু এই নতুন আবিষ্কৃত গ্যাসের মূল্য প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা।
রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি গ্যাজপ্রম দীর্ঘ ৪ বছর ধরে গবেষণা করে এই গ্যাসের সন্ধান পায়। গ্যাজপ্রমের মুখপাত্র এলেক্সি বেলবেজিয়াভ জানান, এই গবেষণা আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী করা হয়েছে এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে ফলাফলগুলো খুবই নির্ভরযোগ্য।
এদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এক টিসিএফ গ্যাস দিয়ে দেশের এক বছরের গ্যাসের চাহিদা পূরণ করা যায়। সেই হিসেবে মজুদ এই গ্যাস দিয়ে বাংলাদেশ অন্তত পাঁচ বছর চলতে পারবে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার বলেছেন, ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার জন্য গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে। শিগগিরই এলএনজি ও সিএনজির মাধ্যমে ঢাকায় গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে।
বর্তমানে ভোলায় ৫টি কূপ থেকে দৈনিক ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। এছাড়া আরো ৪টি কূপ খনন করার পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে দৈনিক ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ সম্ভব। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে দেশে গ্যাস সংকট অনেকটাই দূর হবে এবং উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কমবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভোলা ও সিলেট এলাকা গ্যাসের সম্ভাবনাময় অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তাই দ্রুত পাইপলাইন নির্মাণের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। গ্যাস উত্তোলন বাড়াতে এবং দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে পেট্রোবাংলা ও বিদেশি কোম্পানিগুলোর যৌথভাবে কাজ করা প্রয়োজন।
বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট, যা সরবরাহ করা হচ্ছে ২ হাজার ৬৩৩ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে ১ হাজার ৩৬৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে।
ভোলায় গ্যাসের রিজার্ভ বৃদ্ধির কারণে পাইপলাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যদিও অতীতে অর্থনৈতিক মুনাফার বিষয়টি নিয়ে সংশয় ছিল, এখন আশা করা হচ্ছে, এই নতুন আবিষ্কৃত গ্যাস দেশের জ্বালানি সংকট দূর করবে এবং স্থানীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্পে সরবরাহ বাড়াবে।