যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শহীদ আবু সাঈদকে ‘সন্ত্রাসী’, ‘বিপথগামী’, ‘নিজেদের কোন্দলে নিহত’ ইত্যাদি বলে আখ্যায়িত করেছেন। তারও টাইমলাইন দেখুন মুজিবের পূজায় পূর্ণ, চেতনায় টইটম্বুর। ওর মধ্যেও হিংস্রতা, পাশবিকতা, রক্তের পিপাসা একইরকমভাবে বিদ্যমান। কারণ ওরা শেখ হাসিনার অনুসারী।’
সোমবার (০৭ অক্টোবর) নিজের ফেসবুক আইডিতে সাময়িক বরখাস্ত লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম উর্মির ব্যাপারে এসব কথা বলেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক হোসাইন আহমাদ জুবায়ের।
জুবায়ের আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা তিন সপ্তাহে ১৫০০+ মানুষ খুন করে বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত নন বরং তার প্রতিশোধের নেশা আরও হিংস্র হয়েছে সেটিই বোঝা যায় তার ফোনকলে। এখনও তিনি তালিকা করে রাখতে বলেন ‘শিক্ষা’ দেবেন বলে।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার অনুসারীরাও এরকম সাইকো, জানোয়ার সদৃশ। এ কারণে ওদেরও কোনো অনুশোচনা বা লজ্জা নেই। ওদের শুধু আক্ষেপ, আরও বেশি মানুষ মারতে পারলে বোধহয় ক্ষমতাটা ছাড়তে হতো না।’
কে এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উর্মি?
জুবাইয় বলেন, ‘আমাদের জাতীয় জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ই আমাদের কাছে মর্যাদার, কিন্তু তাকে পুঁজি করে ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী কিংবা ভিন্নমতাবলম্বী, অথবা সাহসী প্রতিবাদী ছাত্র জনতাকে খতম করার যে ঘৃণ্য রাজনীতি, জনগণ তার ইতি টেনে দিয়েছে। সকল অপরাধী ও এই ম্যাজিস্ট্রেটের মতো সকল সহযোগীর বিচার নিশ্চিত করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই নতুন বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।’
এর আগে শনিবার (০৫ অক্টোবর) ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম উর্মি। সেই পোস্টে তিনি লিখেন, ‘সাংবিধানিক ভিত্তিহীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, রিসেট বাটনে পুশ করা হয়েছে। অতীত মুছে গেছে। রিসেট বাটনে ক্লিক করে দেশের সব অতীত ইতিহাস মুছে ফেলেছেন তিনি। এতই সহজ। কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে আপনার, মহাশয়।’
এরপর থেকেই সমালোচনায় মুখে পড়েন ঊর্মি। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে রোববার ওএসডি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। সোমবার তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
তার আগে, এক পোস্টে তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত আবু সাঈদকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
ঊর্মি লেখেন, ‘মানে কত বড় বোকার স্বর্গে আছি এইটা শুধু চিন্তা করি। আবু সাইদ! বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী, সন্ত্রাসী একটা ছেলে যে কি না বিশৃঙ্খলা করতে গিয়ে নিজের দলের লোকের হাতেই মারা পড়ল সে না কি শহীদ! এটাও এখন মানা লাগবে!’
তিনি আরও লেখেন, ‘আর এই আইন ভঙ্গকারী সন্ত্রাসীর জন্য দেশের অথর্ব অতি প্রগতিশীল সমাজ কেঁদে কেটে বুক ভাসিয়েছে। তখন যাকেই বলার চেষ্টা করেছি পুরো ঘটনা তদন্তসাপেক্ষ, সেই দশটা কথা শুনিয়ে দিয়েছে। প্রশাসনে থেকে সরকারের দালাল হয়ে গিয়েছি এ কথা বুঝানোর তো বাকিই রাখনি।’
উর্মি লেখেন, ‘এই যে একটা সন্ত্রাসীর মৃত্যুকে অজুহাত বানিয়ে কত নিরীহ পুলিশ ভাইদের হত্যা করা হলো তার দায়ভার কি এই অথর্ব সমাজ নিবে? এই ছেলের জন্য প্রধান উপদেষ্টা তার দলবল নিয়ে চলে আসলেন রংপুর। লালমনিরহাট থেকে এই উপদেষ্টা দলের জন্য আবার পাঠাতে হয়েছে গাড়ি। রংপুরের বাকি সাত জেলা থেকেও গাড়ি পাঠাতে হয়েছে।’
আবু সাইদের বাড়িতে যাওয়ায় প্রধান উপদেষ্টার সমালোচনা করে তিনি আরও লেখেন, ‘এই আহাম্মকি ভ্রমণের জন্য এত বড় গাড়িবহর পুরো বিভাগ থেকে যে গেল তার তেল খরচ কে দিয়েছে? যাই হোক, ভিডিওটা দেখুন। ভালো মতো দেখুন আর মুখস্থ করুন। আর কী বলব!’