ডিসেম্বরে শেষ ডা. শফিকের মেয়াদ, কীভাবে নতুন আমির নির্বাচন করবে জামায়াত?

ডিসেম্বরে শেষ হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমানের মেয়াদ। তার আগেই নতুন আমির নির্বাচন করবে দলটি। এজন্য এরই মধ্যে দলের ভেতরে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।

জামায়াতের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পদটির নাম ‘আমির’। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছরের জন্য তিনি নির্বাচিত হন। তিনিই পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্যদের পরামর্শক্রমে নায়েবে আমির, সেক্রেটারি জেনারেল, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলসহ নির্বাহী দায়িত্বশীল পদগুলোতে দলের নেতাদের দায়িত্ব দিয়ে থাকেন।

বর্তমানে আমির পদে দ্বিতীয়বারের মতো দায়িত্ব পালন করা ডা. শফিকুর রহমানের মেয়াদ শেষ হবে ডিসেম্বরে। এরপর কীভাবে দলটির সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচন করবে সে বিষয়ে গঠনতন্ত্রে বলা আছে। আরও সহসভাবে জানার জন্য এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের কাছে।

সময় সংবাদকে তিনি বলেন, ‘‌‌‘জামায়াতের ইসলামীর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, আমাদের কেন্দ্রীয় সংগঠনগুলোর মেয়াদ ৩ বছর। এই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আমরা পরবর্তী তিন বছরের জন্য কেন্দ্রীয় সংগঠনের নির্বাচনগুলো সম্পন্ন করি। সেই নির্বাচনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো ‘আমিরে জামায়াত’ নির্বাচন। আরও আছে আমাদের কেন্দ্রীয় মজলিসে সুরা নির্বাচন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের নির্বাচন এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের নির্বাচন।’’

এছাড়া কেন্দ্রীয় বডিতে যারা আছন- নায়েবে আমির, সেক্রেটারি জেনারেল, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলসহ সব দায়িত্বও এসময় বণ্টন করা হয় বলে জানান তিনি।

জামায়াতে ইসলামী গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এটা সবসময় করে আসছে। এবার ২৫ ডিসেম্বরের আগে এসব নির্বাচন আমরা সেরে ফেলবো।

‌‘আমাদের ৫ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন আছে। উনারা আশা করছেন, অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত আমিরে জামায়াত এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে সুরা- এই দুইটা গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন সারতে পারবেন। পরে শপথসহ অন্য বিষয়গুলো আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে সারবো।’ বলেন এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।

আমিরে জামায়াত নির্বাচনের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিন বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ৪/৫ মাস ধরে অভ্যন্তরীণভাবে একটা প্রস্তুতি নেয় জামায়াত। যখন আমিরে জামায়াত নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয় তখন কেন্দ্রীয় মজলিসে সুরা একটা প্যানেল করে। সুরা সদস্যদের গোপন ভোট হয়, সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া তিন জনকে এই প্যানেলে রাখা হয়।

এই তিন জনের নাম আমাদের সারাদেশে যতো পুরুষ এবং নারী রুকন সদস্য আছেন তাদেরকে আমরা জানাই যে, আগামী তিন বছরের জন্য এই তিন জনের মধ্য থেকে যেকোনো একজনকে আপনি আমিরে জামায়াত হিসেবে ভোট দিতে পারেন। আপনি যদি ভালো মনে করেন তাহলে এর বাইরেও যেকোনো একজনকে ভোট দিতে পরবেন। সেই স্বাধীনতাও একজন রুকনের আছে। রুকনরা তাদের বিবেচনায় ভোট দেন। যিনি সর্বোচ্চ ভোট পান তিনি আমিরে জামায়াত নির্বাচিত হন।

বর্তমানে সারা দেশে জামায়াতে ইসলামীর কতজন রুকন আছে? জানতে চাইলে এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, প্রতি তিন মাস পরপর আমাদের জেলা এবং মহানগর থেকে রিপোর্ট আসে। সেটা আমরা যোগ করি। সেই হিসেবে বর্তমানে আমাদের রুকনের সংখ্যা ১ লাখ ৫ হাজারের একটু বেশি হবে।

জামায়াতের আমির নির্বাচন নিয়ে দলটির গঠনতন্ত্রে যা আছে

জামায়াতে ইসলামীর একটি সূত্র সময় সংবাদকে জানিয়েছে, এরই মধ্যে আমির নির্বাচনের দুটি সম্ভাব্য প্যানেল নিয়ে আলোচনা চলছে দলটির মধ্যে। যেটির একটিতে আছেন বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান এবং সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি এ টি এম আজহারুল ইসলামের নাম। অন্য প্যানেলটিতে এটিএম আজহারের পরিবর্তে আছেন বর্তমান আরেক নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহেরের নাম।

জামায়াতের বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে এই দায়িত্ব পালন করছেন। নতুন আমির নির্বাচনের যে দুটি সম্ভাব্য প্যানেলের আলোচনা শোনা যাচ্ছে সেখানে তার নামও আছে।

এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, এটা আমরা শুধু আমাদের রুকনদেরই জানাই। নির্বাচনের শিডিউল যখন ঘোষণা করা হবে তখন তাদের চিঠি দিয়ে জানানো হবে যে, মজলিসে সুরার সদস্যরা গোপন ভোটে এই তিনজনকে প্যানেলের জন্য নির্বাচিত করেছেন। তখনই শুধু এটা রুকনরা জানবেন। এর বাইরে আমরা এটা প্রকাশ করি না। রুকনদের এখনো জাননো হয়নি।

এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, এই নির্বাচনগুলো জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী খুবই স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া। আমরা এটা সব সময়ই করে আসছি। চরম দুঃসময়েও এটা আমরা করেছি। এখন তো পরিস্থিত স্বাভাবিক, কোনো অসুবিধা নাই।

আপনার মতামত লিখুনঃ