নেপালের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী কে এই সুশীলা কার্কি

নেপালের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন সুশীলা কার্কি। তিনি শুধু প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রীই নন, নেপালের সর্বোচ্চ আদালতের প্রথম ও একমাত্র নারী প্রধান বিচারপতিও ছিলেন। রাজনৈতিক পটভূমি ছাড়াই বিচারপতি থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ পদে আসীন হওয়া ৭৩ বছর বয়সী এই নারীকে বিশেষ আলোচনায় এনেছে।

১৯৫২ সালের ৭ জুন পূর্ব নেপালের বিরাটনগরে জন্মগ্রহণ করেন সুশীলা কার্কি। কৃষক পরিবারে বড় হলেও শৈশবেই তিনি পড়াশোনায় মনোযোগী ছিলেন। ১৯৭২ সালে ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মানবিক শাস্ত্রে স্নাতক শেষ করেন। পরের বছর ভারতের বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় (বিএইচইউ) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৯৭৮ সালে ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন।

তিনি ১৯৮৫ সালে ধরণের মহেন্দ্র মাল্টিপল ক্যাম্পাসে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন এবং ১৯৭৯ সাল থেকে বিরাটনগরে আইন পেশায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।

১৯৯০ সালে পঞ্চায়েত শাসনবিরোধী গণআন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের কারণে তিনি বিরাটনগর কারাগারে বন্দি হন। বন্দি জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি পরবর্তীতে ‘কারা’ শিরোনামে একটি উপন্যাস লেখেন।

আইনজীবী হিসেবে পেশা শুরু করে তিনি দ্রুতই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ২০০৮ সালে নেপাল বার অ্যাসোসিয়েশনে সিনিয়র অ্যাডভোকেট হন এবং ২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্টে অস্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এক বছর পর তার পদ স্থায়ী করা হয়। ২০১৬ সালে তিনি নেপালের প্রধান বিচারপতি হন। দায়িত্বকালে দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের কারণে ব্যাপক প্রশংসিত হন সুশীলা।

তবে ২০১৭ সালে তার বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অভিশংসন প্রস্তাব আনা হয়। এই উদ্যোগকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত মনে করা হলেও জনসাধারণের চাপ ও সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশনায় তা ভেস্তে যায়। একই বছরের জুনে অবসর গ্রহণ করেন তিনি।

প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় সুশীলা কার্কি বেশ কিছু যুগান্তকারী রায় দেন। বিশেষ করে সাবেক মন্ত্রী জয়প্রকাশ গুপ্তাকে দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা তার অন্যতম সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হয়। দুর্নীতির প্রতি শূন্য সহনশীল মনোভাবের কারণে তিনি নেপালের বিচারিক স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে ওঠেন।

সম্প্রতি নেপালে দুর্নীতি ও শাসনব্যর্থতার বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের গুলিতে ৫০ জনের বেশি নিহত হন, আহত হন হাজারেরও বেশি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে পদত্যাগ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। পরে রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেল, সেনাবাহিনীর প্রধান ও বিক্ষোভকারীদের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছালে সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

শিক্ষাজীবনে বারাণসীতে পড়াশোনার সময় তিনি দুর্গাপ্রসাদ সুবেদীর সঙ্গে পরিচিত হন এবং পরবর্তীতে তাকে বিয়ে করেন। সুবেদী নেপালি কংগ্রেসের একজন নেতা ছিলেন এবং ১৯৭৩ সালে নেপাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমানের আলোচিত ছিনতাই ঘটনায় জড়িত ছিলেন, যার মাধ্যমে কংগ্রেস আন্দোলনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল।

অবসরোত্তর সময়ে সুশীলা কার্কি সামাজিক কর্মকাণ্ড, সিভিক আন্দোলন ও দুর্নীতিবিরোধী প্রচারণায় সক্রিয় ছিলেন। তার নিরপেক্ষতা ও দৃঢ় অবস্থানই তাকে আজকের রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে নিয়ে এসেছে।

সূত্র: এনডিটিভি

আপনার মতামত লিখুনঃ