সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হওয়া এক ভিডিও নিয়ে বেশ তোলপাড় চলছে বরগুনায়। ফাঁস হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশের বিছানায় বসে ভাত খাচ্ছিলেন বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত বরগুনার আমতলী উপজেলার যুবলীগ নেতা আরিফ উল হাসান। শুধু তাই নয়, বরগুনার সাবেক ডিবি ওসি ও বর্তমান আমতলী উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পরিদর্শক বশির আলমের সঙ্গে একান্তে কথাও বলতে দেখা গেছে তাকে।
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই দায়িত্ব পালনে অনিয়ম ও আসামির প্রতি অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কোর্ট পুলিশের বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে বশির আলমসহ ছয় পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করে সংযুক্ত করা হয় পুলিশ লাইনসে। একইসঙ্গে ঘটনার তদন্তে একটি কমিটিও গঠন করেছেন বরগুনার পুলিশ সুপার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আলোচিত ঘটনাটি গত ২ সেপ্টেম্বরের। আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পুলিশের ব্যারাকে পুলিশের বিছানায় বসে খাবার খাওয়ার ওই ভিডিওতে দেখা যায় সন্ত্রাস দমন, বিস্ফোরক নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ একাধিক মামলায় অভিযুক্ত গ্রেফতার যুবলীগ নেতা আরিফ উল হাসানকে। এসময় তার পাশে স্বজনদের সঙ্গে বসে থাকতে দেখা যায় কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক ও বরগুনার সাবেক গোয়েন্দা পুলিশের ওসি বশির আলমকেও।
২২ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, যুবলীগ নেতা আরিফ তার স্বজনদের উপস্থিতিতে পুলিশ ব্যারাকের মধ্যে পুলিশের বিছানায় বসে ভাত খাচ্ছেন।
ভিডিওর ৯ সেকেন্ডে দেখা যায়, একই বিছানায় কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক বশির আলমের সঙ্গে একান্ত আলাপ করছেন আরিফ। এরপরে তাকে আবারও খাবার খেতে দেখা যায়। এ ঘটনায় দায়িত্ব পালনে অনিয়ম ও আসামিকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক বশির আলমের বিরুদ্ধে ।
স্থানীয় কয়েকজনের অভিযোগ, গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময়ও আলোচনায় ছিলেন বশির আলম। তখন গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক হিসেবে আন্দোলনকারীদের ব্যাপক হয়রানি করেছিলেন তিনি। সরকার পরিবর্তনের ফলে কর্মস্থল পরিবর্তন হলেও তার বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। এ সুযোগে আইনের বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে এখনো প্রকাশ্য সহযোগিতা করছেন বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের। কোর্ট পরিদর্শক বশির আলমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।
এদিকে অভিযুক্ত আসামিকে পুলিশ ব্যারাকে বসিয়ে খাবার খাওয়ানোর সুযোগ বা বিধান নেই জানিয়ে বরগুনা জেলা সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট মো. নুরুল আমিন গণমাধ্যমকে বলেন, যুবলীগ নেতা আরিফের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন, বিস্ফোরক নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে ঢাকা ও বরগুনায় মামলা রয়েছে। আমতলীতে স্ত্রীর করা যৌতুক মামলারও আসামি তিনি। এ মামলায় গত ২ সেপ্টেম্বর আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়েছিল তাকে।
তিনি বলেন, পুলিশের বিছানায় বসে আসামির খাবার খাওয়ার বিষয়টি শুনেছি। এটির আসলে আইনগত সুযোগ নেই। আর এটা ঠিকও না। এতে খাবারের মাধ্যমে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকতে পারে।
তবে, ভাইরাল ভিডিওটি কোর্ট ব্যারাকের নয় বলেও দাবি অভিযুক্ত কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক বশির আলমের। এ বিষয়ে আর কোনও বক্তব্য দিতে রাজি হননি তিনি।
বরগুনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আল-মামুন শিকদার বলেন, ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রচারের পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। তাদের নির্দেশনায় এ দিন দায়িত্বে থাকা সব পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে বরগুনায় সংযুক্ত করা হয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।