শেষ সময়ে আলোচনায় যারা

রাত পোহালেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন। ক্যাম্পাস জুড়ে নির্বাচনী আমেজ। গতকাল শেষ হয়েছে প্রচার-প্রচারণা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভোট নিয়ে রয়েছে ভীতি। সেইসঙ্গে ক্যাম্পাস জুড়ে মাদক-টাকার ছড়াছড়ি। অভিযোগ রয়েছে অনেক প্রার্থীই প্রচারণার পাশাপাশি ভোটারদের হাতে মাদক ও টাকা পৌঁছে দিচ্ছেন। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন মিলনস্থল টারজান পয়েন্ট, সিডনি ফিল্ড, চৌরঙ্গী, মুরাদ চত্বরসহ আবাসিক হলগুলোতে মাদকের সহজলভ্যতা চোখে পড়ছে। অভিযোগ রয়েছে, নবীন শিক্ষার্থীদের কাছে মাদকদ্রব্য সরবরাহ করছেন। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসের পরিবেশ ক্রমেই অস্বস্তিকর হয়ে উঠছে। শিক্ষার্থীদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিষয়ে সমালোচনা করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ও হলসমূহের প্রভোস্ট ও দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অবহেলার কারণে এমনটা হচ্ছে। এ ছাড়া নির্বাচন উপলক্ষে কিছু কিছু প্রার্থী এটাকে কাজে লাগিয়ে ভোট বাগানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ আছে। স্বতন্ত্র প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী শাকিল মিয়া বলেন, বিভিন্ন হলে মাদকসহ অন্যান্য নেশা জাতীয় দ্রব্য সরবরাহ করা হচ্ছে। নির্বাচনী আচরণবিধি তো বটেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ও দেশের আইনেরও পরিপন্থি। এ ছাড়া নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা হলে হলে বিরিয়ানিও সরবরাহ করেছে। ভোটারদের ক্যান্টিনে নিয়ে খাওয়াচ্ছে। আমরা আশঙ্কা করছি এগুলো নিরপেক্ষ নির্বাচনের সম্পূর্ণ পরিপন্থি।

এর আগে গতকাল ৮ই আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক সোহেল আহমেদকে সভাপতি করে ২১ সদস্যবিশিষ্ট একটি মাদক নিয়ন্ত্রণ কমিটি গঠন করে বিশ্বিবদ্যালয় প্রশাসন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্টবৃন্দ এবং নিরাপত্তা শাখার সহযোগিতায় মাদকের বিরুদ্ধে তৎপরতা চালানো হবে।

নির্বাচনে একক আধিপত্য বিস্তার করতে পারবেন না কোনো প্রার্থী বলে মনে করছেন ভোটাররা। জাকসুতে শেষ সময়ে আলোচনায় রয়েছেন চার ভিপি (সহ-সভাপতি) প্রার্থী। শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল, ’২৪ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া ‘স্বতন্ত্র শিক্ষা সম্মিলন’র আব্দুর রশিদ জিতু, ছাত্রদল সমর্থিত শেখ সাদী ও শিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে আরিফ উল্লাহ।
শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ ব্যাচের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী। বিগত জুলাই আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তৎকালীন সময়ে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সেইসঙ্গে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারীদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন। কখনো সামনে থেকে এবং কখনো পর্দার আড়ালে থেকে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ৫ই আগস্ট পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যৌক্তিক আন্দোলনগুলোতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে তিনি সর্বদা সোচ্চার ছিলেন। এর পাশাপাশি তিনি গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।

স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতুও বিশ্ববিদ্যালয়ের একই ব্যাচের। তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী। তিনি গণ-অভ্যুত্থানে জাবি ক্যাম্পাস থেকে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ ছাড়াও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ছিলেন। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার থেকে বেরিয়ে আসেন। পরবর্তীতে তিনিসহ আরও কয়েকজন সমন্বয়ক মিলে ‘গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন’ নামে একটি প্ল্যাটফরম গড়ে তোলেন।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল হতে ভিপি প্রার্থী শেখ সাদী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮ ব্যাচের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি শাখা ছাত্রদলের মীর মশাররফ হোসেন হলের সভাপতি। জুলাই আন্দোলনে তিনিও জাবি ক্যাম্পাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। শিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আরিফ উল্লাহ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ ব্যাচের ফার্মেসি বিভাগের একজন শিক্ষার্থী। তিনি জাবি শাখা শিবিরের একজন সদস্য।

এ ছাড়াও জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে আলোচনায় রয়েছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ প্যানেল থেকে আবু তৌহিদ মো. সিয়াম, ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী পরিষদ’ থেকে মাজহার ইসলাম, ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ প্যানেলে মো. শাকিল আলী ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেলের তানজিলা হোসাইন বৈশাখী অন্যতম।

জাকসুতে জুলাই আন্দোলনে আহত চার প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিন প্যানেল থেকে। ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ আহত শিক্ষার্থী মো. শাকিল আলী জিএস পদে, শিবির সমর্থিত প্যানেল হতে মো. জাহিদুল ইসলাম সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ও মোহাম্মদ রায়হান উদ্দিন সহ-সাংস্কৃতিক পদে নির্বাচনে লড়ছেন। এ ছাড়াও জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের প্যানেল হতে মো. আবিদুর রহমান সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে লড়ছেন। এদের মধ্যে আহত শাকিল আলী শরীরে এখনো গুলি বয়ে বেড়াচ্ছেন।

আগামীকাল রাজনৈতিক এবং স্বতন্ত্র মিলে মোট ৮ প্যানেলসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়ন ফরম ৮১৩ জন সংগ্রহ করে জমা দেন ৭৪০ জন। এর মধ্যে বাতিল হয় ২১ জনের। চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে জাকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১৭৮ জন। আর হল সংসদসহ মোট প্রার্থী ৪৭৫ জন। বাকি প্রার্থীরা তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে নির্বাচনকে ঘিরে নেয়া হয়েছে নিরাপত্তাসহ পূর্ণ প্রস্তুতি। আগামী ১১ই সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। নির্বাচনে ২১টি কেন্দ্রে সর্বমোট ২২৪টি বুথ থাকবে। ২১ জন রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে ৬৭ জন করে পোলিং ও সহ-পোলিং অফিসার থাকবেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরালো করার জন্য সাদা পোশাক এবং পোশাকধারী ১২০০ পুলিশ মোতায়েন করা হবে। এ ছাড়াও সেনাবাহিনী স্ট্রাইক ফোর্স হিসেবে কাজ করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, আমরা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য পূর্ব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আমরা আশা রাখছি যে একটা উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা নির্বাচন শেষ করতে পারবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, আমরা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য পূর্ব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আমরা আশা রাখছি যে, একটা উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা নির্বাচন শেষ করতে পারবো।

আপনার মতামত লিখুনঃ