ছবি বিকৃতি থেকে হিজাবফোবিয়া, ব্যালটে জবাব দিলেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেল থেকে সদস্য পদে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন সাবিকুন্নাহার তামান্না।

প্রচারণার ১ম দিনে চারুকলায় তার হিজাব পরিহিতা ছবি বিকৃতির ঘটনার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানান। তার এই জয়কে হিজাবফোবিয়ার বিরুদ্ধে ব্যালটের জবাব বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক মো. জসিম উদ্দীন চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন। ফলাফলে তামান্না সদস্য পদে পেয়েছেন ১০ হাজার ৮৪ ভোট, যা এবারের নির্বাচনে সদস্য পদে সর্বোচ্চ। তামান্নার ফলাফল ঘোষণার পর সিনেট ভবনে ‘হিজাব হিজাব’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে।

সাবিকুন্নাহার তামান্না ইসলামী ছাত্রীসংস্থার ঢাবি শাখার সভানেত্রী। গত ২৬ আগস্ট ডাকসু নির্বাচনের প্রচারণার প্রথম দিনে চারুকলায় সাবিকুন্নাহার তামান্নার হিজাব পরা ছবিযুক্ত ব্যানার ভাঙচুর করা হয়। প্যানেলের শীর্ষ তিন প্রার্থীসহ তার ছবিও বিকৃত করে ব্যঙ্গ করা হয়। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় ওঠে। তবে সেই বিকৃত ছবিতেই প্রচারণা চালান তামান্না, যা শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে। অনলাইনে বুলিংয়ের শিকারও হন তিনি। তবে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বিপুল ভোটে বিজয়ী হন তিনি।

ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের শিক্ষার্থী আলম সাখাওয়াত বলেন, যেদিন প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলাতে সাবিকুন নাহার তামান্নাকে হিজাবের উপর বাজে বিকৃতি করা হয়, সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সাবিকুন নাহার তামান্নাকে সদস্য পোস্টে সবার আগে ভোট দিবো হিজাবফোবিয়া ও ইসলামোফোবিয়ার মুখে চপেটাঘাত করার জন্য। কেন্দ্রীয় সদস্য পোস্টে ২১৭ জনের তালিকা থেকে প্রথম ভোটটা ২০৪ নং ব্যালটে দিয়েছি। একজন নারীর পোশাকের স্বাধীনতা রয়েছে সেটা নিয়ে আপনাদের প্রগতিশীলদের লম্বা বয়ান আছে। তো একজন মেয়ে হিসেবে হিজাব-বোরকা পড়ারও স্বাধীনতা আছে। কে কি পোশাক পড়লো সেটা জাজ করতে যাওয়া আপনাদের অজ্ঞতা-মূর্খতা। সবার যদি ব্যক্তিগত স্বাধীনতা থাকে, তাহলে জোর আরোপিত কোনো কিছুই উত্তম নয়। আমি অন্তত জোর করে চাপিয়ে দেয়ার বিপক্ষে!

৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আহমেদ আতাউল্লাহ সালমান বলেন, আমি প্রথমে হিজাব স্লোগান দেই, পরে সবাই সঙ্গে সঙ্গে স্লোগান ধরে। মূলত তামান্না আপুর ওপর করা জুলুমের প্রতিবাদ ছিল এটি। চারুকলায় তার ছবির উপর বিকৃত কার্টুন হিজাফোবিয়ার যে প্রকাশ ঘটাইছিলো সেটা যাতে তামান্নার বিজয়ের পরে প্রতিবাদ স্বরূপ শ্লোগান দেয়া হয়।

মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আলমানি মোস্তাকিম তাহসিন বলেন, অচেনা সত্ত্বেও ডাকসু তে তামান্না আপুর জন্য ভোট কাস্ট করছি! তামান্নার আপুর লড়াই হিজাবোফোবিয়ার বিরুদ্ধে, ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে।

সাবিকুন্নাহার তামান্না বলেন, গ্রামের একটা স্কুলে ৯ম শ্রেণিতে থাকাকালে নিকাব পড়ায় এক শিক্ষক আমাকে ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছিলেম। এসএসসিতে রেজাল্ট ভালো হওয়ার পরেও শুধুমাত্র নিকাব পড়ার জন্য আমাকে কলেজে অ্যালাউ করবে না বলেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও আমার রেজাল্ট ভালো, হিজাব-নিকাব আমার জন্য প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়নি। হিজাব নিকাবকে প্রগতির অর্থে অন্তরায় হিসেবে দেখায় একটা মহল। হিজাব উন্নতির পথে বাধা নয়, পৃথিবীর নারীরা প্রতিদিন তা প্রমাণ করে যাচ্ছে ক্লাসরুম, কর্মক্ষেত্রে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এটা প্রমাণ করেছেন।

আপনার মতামত লিখুনঃ