জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে শিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী মাজহারুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা ঐক্যের ডাক দিতে চাই। আমরা তাদের সঙ্গে সহাবস্থানের রাজনীতি করতে চাই, একসঙ্গে চলতে চাই। তারা ভোট বর্জন করলেও আমরা তাদের সঙ্গে আছি, তারা ফিরে আসলেও আমরা তাদের সঙ্গে আছি। আমরা সহাবস্থানের রাজনীতি করতে চাই, সহমর্মিতার রাজনীতি করতে চাই। এক্ষেত্রে আমাদের দূরত্বগুলো দূর করতে চাই।’
বৃহস্পতিবার মাওলানা ভাসানী হল প্রাঙ্গণে ছাত্রদলের ভোট বর্জনের পরপরই সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘জাকসু নির্বাচনে প্রশাসনের যে টেকনিক্যাল ভুল ছিল সেগুলো বড় আকারে হওয়া থেকে শিক্ষার্থীরা রুখে দিয়েছে। যেকোনো প্রকার ষড়যন্ত্র আর ফাঁদে পা দেয়নি। এখনও শিক্ষার্থীরা লম্বা লাইন ধরে আছে। উপাচার্য ঘোষণা দিয়েছেন যতক্ষণ পর্যন্ত লাইনে শিক্ষার্থীরা থাকবে ততক্ষণ ভোটগ্রহণ চলবে।’
মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘সুতরাং এটি প্রতীয়মান শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিচ্ছে। এটাই দেখা উচিত শিক্ষার্থীরা কতটুকু অংশগ্রহণ করছে, কতটুকু সমর্থন করছে।’
বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি হলে ভোটগ্রহণে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থী ও প্রার্থীরা। শহীদ তাজউদ্দিন হল, জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম ও ফজিলাতুন্নেছা হলে ভোটগ্রহণে বিশৃঙ্খলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থী ও প্রার্থীদের প্রতিবাদে দু’টি হলের মধ্যে একটিতে আধাঘণ্টা, আরেকটিতে একঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল।
এর আগে নির্বাচনে বেশকিছু অসঙ্গতির অভিযোগও তুলে ধরেছে ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল। বৃহস্পতিবার এই প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আরিফুল্লাহ আদিব বলেন, ‘নির্বাচনে ইতিমধ্যে আমরা বেশকিছু অসঙ্গতি দেখতে পাচ্ছি। একটি নির্বাচনের জন্য প্রশাসনের যতটুকু প্রস্তুতি থাকা দরকার তার একটিও গ্রহণ করে নাই। কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট থাকার বিষয়ে রাতে মিটিং করেছে। সকালে আমরা কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট পাঠালে দায়িত্বরতরা বলেছেন, এ বিষয়ে তারা জানেন না। এগুলো আগেই সমাধান করা দরকার ছিল।’
ছাত্রদলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের আধিক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রশাসন বলেছিল সকাল ৬টা থেকে ক্যাম্পাসে সাবেকরা অবস্থান করতে পারবেন না। কিন্তু বিভিন্ন স্থানে ও হলে ছাত্রদলের সাবেক অনেককে দেখা যাচ্ছে। তারা সাবেক শিক্ষার্থী, বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারদের ম্যানোপুলেট করছে। আমরা নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি অবগত করেছি কিন্তু কোনো অ্যাকশন নেয়নি। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান সোহান রবীন্দ্রনাথ হলে অবস্থান করছেন। যেখানে সাবেক শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে থাকার কথা না। প্রতিটা কেন্দ্রে সাংবাদিকদের হলে ঢোকার অনুমতি দেওয়ার কথা থাকলেও নারীদের হলে সাংবাদিকদের ঢুকতে দিচ্ছে না।
নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয় ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মওলানা ভাসানী হলের অতিথি কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী বৈশাখী ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বলেন, তাজউদ্দীন হলে আমাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তালিকায় ভোটারদের ছবি নেই, ২১ নং হলে মব সৃষ্টি করা হয়েছে। জাহানারা ইমাম হলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর গায়ে হাত তোলা হয়েছে। এই নির্বাচন নিরপেক্ষতা হারিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, জামায়াত নেতার সরবরাহকৃত ওএমআর মেশিন আমরা চাইনি। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানের সরবরাহকৃত ব্যালটেই ভোট হচ্ছে।
বৈশাখী বলেন, মেয়েদের হলে একই মেয়ে বারবার ভোট দিতে গেছেন। শিবিরপন্থী সাংবাদিকরা মিস বিহ্যাভ করেছেন ছাত্রদলের প্রার্থীদের সঙ্গে, সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে না। এটি কারচুপি ও প্রহসনের নির্বাচন। তাই নির্বাচন বর্জন করতে বাধ্য হচ্ছি। নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের রায়ের প্রতিফলন হচ্ছে না।
অন্যদিকে নির্বাচনের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) সমর্থিত ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেল। নির্বাচন কমিশনকে ইঙ্গিত করে প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী স্মরণ এহসান লিখিত বক্তব্যে বলেছেন, ‘এই নির্বাচন যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে হচ্ছে না। আমরা এই নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করছি। আমরা বলতে চাই, তারা শুরু থেকেই আমাদের আস্থা, ভরসা ও আকাঙ্ক্ষার জায়গা নষ্ট করেছে।’ তিনি বলেন, সকাল থেকে কেন্দ্রগুলোতে নানা অনিয়ম ও অসঙ্গতি চলছে। এই অনিয়মের শুরু সম্প্রীতির ঐক্যের ভিপি প্রার্থী অমর্ত রায়ের প্রার্থিতা জোরপূর্বক এবং ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বাতিল করার মাধ্যমে। এই অনিয়মের ধারাবাহিকতায় আজ ভোট গ্রহণের চূড়ান্ত অনিয়ম এবং প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে।