মোনামির সঙ্গে টিএসসিতে সেদিন কী ঘটেছিল, যা বললেন হামিম

গত মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনের দিন দুপুর ১২টার দিকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক ও সহকারী প্রক্টর শেহরীন আমিন মোনামির সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী ছিলেন তানভীর বারী হামিম।

এ ঘটনার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনার সময়কার পরিস্থিতি নিয়ে ‘ফেস দ্যা পিপল’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলের টক শোতে কথা বলেন শিক্ষক শেহরীন আমিন মোনামি ও তানভীর বারী হামিম।

সেখানে তানভীর বারী হামিম বলেন, ডাকসু নির্বাচনের দিন মোনামি ম্যামের সঙ্গে আমার যখন কথোপকথন হয়েছে তার আগেও কিন্তু দুই-তিনটি কাহিনী ঘটে গেছে। প্রথমেই সকালে যখন নির্বাচনটি শুরু হয়েছে, তখন আমাদের যে ভিপি পদপ্রার্থী ছিলেন তিনি (আবিদুল) একটি কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। সেটি নিয়ে একজন রিটার্নিং অফিসার বলেছিলেন এটি আচারণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে। পরে এটা দেশের জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতে সকাল সাড়ে ৮টার ভেতরে নিউজ করে ফেলেছে যে, ছাত্রদলের ভিপি পদপ্রার্থী আচারণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। তার ফলে শিক্ষার্থীদের ভেতরে একটি তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। একজন প্রার্থী তিনি আচারণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। পরবর্তীতে দেখা যায় ডাকসু নির্বাচনি গঠনতন্ত্রের মধ্যে লেখা আছে যে একজন প্রার্থী তিনি তার কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন। নির্বাচন কমিশনও বলেছে এটা কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়নি। কারণ এটা ডাকসুর গঠনতন্ত্রে উল্লেখ রয়েছে।

হামিম বলেন, ‘পরবর্তীতে আমরা বিভিন্ন কেন্দ্রে দেখতে পেলাম যে সকাল থেকে প্রত্যেকের প্যানেল শিট ভোটারদের সরবরাহ করছিল। বিভিন্ন কেন্দ্রে শুধু ছাত্রদল বা ছাত্রশিবির ছাড়াও বিভিন্ন স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও নিজেদের প্যানেল শিট সরবরাহ করছিল। আমার হাতেও অনেকেও দিয়েছিল। পরবর্তীতে আমি টিএসসিতে আসার পরে মোনামি ম্যামের সঙ্গে যে ঘটনা তার আগে আরও একটি ঘটনা ঘটেছিল। সেটা হলো টিএসসি বুথ কেন্দ্রে একটি ব্যালট পেপার পাওয়া গেছে, যেখানে দুইটা ক্রস চিহ্ন দেওয়া। অর্থাৎ সেখানে একটি প্যানেলে ভিপি এবং জিএসকে ক্রস চিহ্ন দিয়ে ভোট দেওয়া।’

তিনি আরও বলেন, সেটি নিয়ে একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সুতারাং এই দুই-তিনটা ঘটনার পর আমি যখন টিএসসিতে গেলাম তখন ওইখানে যারা নারী প্রার্থী ছিলেন তারা বলছেন যে, এখানে আমাদের অন্য সবার প্যানেল শিট সরবরাহ করছিল। কিন্ত আমাদের ছাত্রদলের প্যানেলের শিট কাউকে দিতে দেওয়া হচ্ছে না।

‘তখন আমি বলেছি যে অন্যদের দিলে তোমাদেরও দিতে দেবে। তার ১০ মিনিট পর তারা আবার এসে বলে আমাদের দিতে দিচ্ছে না অন্যরা সবাই প্যানেল শিট দিচ্ছে। এক্ষেত্রে একটা বিষয় হচ্ছে যে শিবিরের যে প্যানেল শিটটা ছিল সেটা ছিল অত্যন্ত ফোল্ডিং প্যানেল শিট। সেটা হাতে নিয়ে যে কেউ ক্যারি করতে পারত। আর আমাদের যে প্যানেল শিট সেটা একটু বড়। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্যানেল শিট সেটা অনেক বড়। আর এই ঘটনাগুলো যখন ঘটে গেছে, তখন আপনি জানেন যে নির্বাচনের সময় প্রত্যকটা মোমেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরে আমি যখন ম্যামের কাছে গেলাম যে, ম্যাম আপনি এদেরকে কেন অনুমতি দিচ্ছেন না? তখন ম্যাম বলেছিল যে, আমি কাউকেই অনুমতি দিচ্ছি না। পরবর্তীতে আমাদের নারী প্রার্থী যারা ছিলেন তারা বললেন যে, আপনি শিবিরকে দিতে দিচ্ছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকে দিতে দিচ্ছেন, আমাদেরকে দিচ্ছেন না। তখন ম্যাম এক পর্যায়ে বলেছেন যে, তোমরা ছাত্রদল সবচেয়ে বেশি দিয়েছ। এটা মিডিয়ায় আসছে। তখন আমি বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়েছি।’

সেদিনের ঘটনা নিয়ে অনুতপ্ত হামিম জানান, যদিও আমার ভাষাটি এরকম হওয়া উচিত হয়নি। আমি উত্তেজিতভাবে কথাটি বলেছি। এর আগে যে তিনটা কাহিনী ঘটেছে তার প্রেক্ষাপটে আমার মনে হচ্ছিল যে, এখানে একটা বায়াসনেস তৈরি হয়েছে। তার আগেও একুশে হলে একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ব্যালট বাক্সে ব্যালট ভরে দিচ্ছেন। পরে তাকে ওই হল থেকে প্রত্যাহারও করা হয়।

তানভীর বারী হামিম বলেন, এরকম যখন কাহিনী ঘটে গেছে, তার পূর্বে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছে যে, এখানে ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবিরের পক্ষে ভোট কারচুপি চলছে। যখন সমষ্টিগতভাবে প্রতিবাদ করছে তখন আমরা এটাকে ক্রিটিক্যালি দেখা শুরু করেছি। আমি তখন ম্যাডামকে ওইখানে প্রতিবাদ করেছি।

‘তিনি আমার শিক্ষক সে হিসাবে না। আমি প্রতিবাদ করেছি তিনি প্রশাসনিক কর্মকর্তা সেই হিসেবে। ম্যামের সঙ্গে আমার খুবই ভালো সম্পর্ক। কিন্ত একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে আমি প্রতিবাদ করেছি। যদিও প্রতিবাদের ভাষা ঠিক ছিল কিন্ত আমি সেখানে উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। এ রকম হওয়া উচিত হয়নি। এজন্য আমি নিজেই মন থেকে সরি ফিল করেছি। আসলে এই ভাবে বলা ঠিক হয়নি। কারণ সবকিছুর পরে তিনি আমার একজন শিক্ষক’—যোগ করেন হামিম।

প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের সময় ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী ছিলেন তানভীর বারী হামিম। নির্বাচনে তিনি ৫২৮৩ ভোট। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন হামিম।

আপনার মতামত লিখুনঃ