‘প্লিজ, কেউ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না’ ব্যঙ্গ করে বানানো ভিডিওর নেপথ্যে শিবিরের নেতাকর্মী

চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা ও ডাকসু ভিপি পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খানের ‘প্লিজ কেউ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না’ উক্তি ব্যঙ্গাত্মক ভিডিও নিয়ে সমালোচনা চলছে। ভিডিওতে সাদিক কায়েমকেও ‌’পাকিস্তানি’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, ভিডিওটি তৈরির নেপথ্যে রয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের কয়েকজন নেতাকর্মী।

ডাকসু নির্বাচনে শিবিরের বিজয়ের পরে গতকাল রাতে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিরা হচ্ছেন ওমর ফারুক (ইইই ২০-২১), সোহান হাসান সাকিব (সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার, ১৭-১৮), রোকনুজ্জামান রোকন (মার্কেটিং ১৯-২০), নাইমুর রহমান (অর্থনীতি ২১-২২), নাহিদ হাসান (আল কুরআন ২০-২১), আবদুল্লাহ নুর মিনহাজ (আল হাদিস ২০-২১) , মোজাম্মেল হক (দাওয়াহ ২০-২১)।

ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পরে উমামা ফাতেমা ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, কথাটাতে ভুল কই? আবিদুল ইসলাম খান জুলাইয়ের উত্তাল সময়ে ৫ আগস্টে গুলিবর্ষণের মধ্যে বলেছিলেন ‘প্লিজ, কেও কাওকে ছেড়ে যাবেন না’। কিন্তু আমরা কেও একসাথে থাকতে পারিনি। সবাই বিভক্ত হয়ে গেছে। গুজব, হিংসা, অবিশ্বাস দানা বেঁধেছে। তাই বলে কি অভ্যুত্থান মিথ্যা হয়ে যায়? ঐক্যের বাণী মিথ্যা হয়ে যায়? এটাই প্রশ্ন রেখে যাব আপনাদের কাছে।

ডাকসুর জিএস পদে নির্বাচন করা শেখ তানভীর বারী হামিম লিখেছেন, “প্লিজ,কেউ কাউকে ছেড়ে যেয়েন না”- বাংলা ব‍্যাকরণে একটি অনুরোধসূচক বাক্য কিন্তু এর প্রভাব আন্দোলনের সেই মুহুর্তে ছিলো অসীম। আমি সকলকে অনুরোধ করবো- ‘বহু মানুষের রক্ত, অনেক পরিবারের অশ্রু ও আত্মত‍্যাগের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের কোন মুহুর্তকে নিয়ে ব‍্যঙ্গ করবেন না।এটা জাতি হিসেবে অত‍্যন্ত লজ্জার। মনে রাখবেন ব‍্যক্তি থেকে দল বড়, দল থেকে দেশ!’

আর শিক্ষার্থীদের হৃদয়স্পর্শী সেই উক্তিকারী আবিদুল ইসলাম লিখেছেন, পাঁচজন শহীদের রক্তে ভেঁজা ঐতিহাসিক এই লাইনটুকুও শিবিরের উগ্রতা থেকে রেহাই পায়নি। আমি বিশ্বাস করি এই উগ্রতায় পুরো জাতি লজ্জিত হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হলের (সাবেক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হল) ইন্টারন্যাশনাল ব্লকে। উক্ত হলের ইন্টারন্যাশনাল ব্লকের অধিকাংশ শিক্ষার্থী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে জানা গেছে। পাশাপাশি ভিডিওতে থাকা প্রত্যেককেই শাখা ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী হিসেবে ক্যাম্পাসে শিবিরের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। তবে, ভিডিওটির খন্ডিত অংশ প্রচার করা হয়েছে বলে দাবি ভিডিওতে থাকা শিবিরের নেতাকর্মীদের।

জানতে চাইলে প্রকৌশল অনুষদ ছাত্রশিবিরের ওমর ফারুক বলেন, আবিদ ভাইকে হেয় করার উদ্দেশ্যে বা জুলাই যোদ্ধাদের ব্যাঙ্গ করার কোন উদ্দেশ্য আমাদের ছিলো না। বন্ধুবান্ধব একজায়গা হলে নিজেদের মধ্যে যেমন মজা হয় সেরকম একটা। এখানে আবিদ ভাইয়ের অংশটি ভাইরাল হয়েছে কিন্তু সেখানে প্রথমে সাদিক কায়েম পাকিস্তানি অংশটিও মক করা হয়েছিল। আবিদ ভাইকে আমি নিজেও পছন্দ করি, নিজেদের মধ্যে মজাটা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে গেছে যা সবার কাছে নেগেটিভ বার্তা দিয়েছে। এটা আমাদের এভাবে করা উচিত হয়নি।

সোহান হাসান সাকিব বলেন, এই ভিডিওটি আমরা সহপাঠীদের মধ্যে আড্ডার ছলে করেছি। এটি সেন্স অব হিউমার থেকে করা জাস্ট একটা পলিটিক্যাল স্যাটায়ার। এটি উদেশ্যমূলকভাবে কাউকে আঘাতের জন্য করা হয়নি। ভিডিওটিতে আবিদ ভাইয়ের কথার পাশাপাশি সাদিক কায়েম ভাইকে নিয়েও মন্তব্য ছিল। কিন্তু ভিডিওটির একটি অংশ পোস্ট করে আবিদ ভাইয়ের বিষয়ে বিশেষভাবে উল্লেখ করে একটি নেগেটিভিটি তৈরি করা হয়েছে। বিষয়টির এমন অর্থ নিয়ে অনেকে কষ্ট পেয়েছেন এটি আমাদের মর্মাহত করেছে। আবিদ ভাইসহ যারা আমাদের এই কর্মকাণ্ডে ব্যথিত হয়েছেন সবার কাছে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।

আপনার মতামত লিখুনঃ