মাদরাসা কমিটির অনুষ্ঠানে দাওয়াত না পেয়ে আয়োজকদের সব খাবার খেয়ে গেলেন ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীরা। বরগুনার আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ন ম ম আমজাদিয়া আলিয়া মাদরাসায় এই ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ন ম ম আমজাদিয়া আলিয়া মাদরাসার ব্যবস্থাপনা কমিটি গত ৪ সেপ্টেম্বর গঠন করা হয়। আমতলী সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. ফজলুল হককে কমিটির সভাপতি করা হয়। কমিটির প্রথম সভা গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হয়। সভা উপলক্ষে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ৫০ জন আমন্ত্রিত অতিথির জন্য ওইদিন দুপুরের খাবারের আয়োজন করেন। কিন্তু মাদরাসার সভায় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীদের দাওয়াত দেয়া হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ হন গুলিশাখালী ইউনিয়ন ও ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীরা।
ওইদিন দুপুরে ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মাহবুব কাজী ও সাধারণ সম্পাদক রিপন কাজীর নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জন নেতাকর্মী মাদরাসায় এসে অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করে এবং তাদের দাওয়াত না দেয়ার কারণ জানতে চান। পরে শিক্ষকদের গালাগাল করে তারা রান্না করা খাবার খেয়ে ফেলেন এবং অবশিষ্ট খাবার যাতে আমন্ত্রিত অতিথিরা খেতে না পারে সেজন্য পাতিলে টিস্যু, পানি ও তাদের খাওয়া উচ্ছিষ্ট খাবার ফেলে রাখেন। পরে তারা শিক্ষক, কর্মচারী ও সভায় আমন্ত্রিত অতিথিদের হুমকি দিয়ে চলে যান এমন অভিযোগ শিক্ষকদের।
ঘটনার জড়িত রিপন কাজী তার ফেসবুক আইডি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রুপ ছবি দিয়ে পোষ্ট করেন ন ম ম আমজাদিয়া আলিম মাদরাসায় পিকনিকের কিছু স্মৃতি। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় ওঠে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আইনগত ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি মাদরাসা কর্তৃপক্ষের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, ন ম ম আমজাদিয়া মাদরাসার ঘটনা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলকেও হার মানিয়েছে। এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাই।
অভিযুক্ত ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মাহবুব কাজী খাবার খেয়ে ফেলার কথা স্বীকার করে বলেন, মাদরাসায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী নিয়ে অনুষ্ঠান করায় ও আমাদের দাওয়াত না দেয়ায় আমরা খাবার খেয়ে ফেলেছি। কিন্তু কোনো খাবার নষ্ট করিনি।
মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আলী হোসেন বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা মাদরাসার সভা কক্ষে প্রবেশ করে শিক্ষক, কর্মচারী ও আমন্ত্রিত অতিথিদের গালাগাল করেন। পরে তারা অতিথিদের জন্য রান্না করা খাবার খেয়ে ফেলেন। অবশিষ্ট খাবারে তারা টিস্যু, উচ্ছিষ্ট খাবার ও নোংড়া পানি ফেলে নষ্ট করেছেন।
তিনি আরও বলেন, খাবার শেষে তারা আমাদের দেখিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। ভয়ে আমরা বিষয়টি কাউকে জানাইনি। এমন গর্হিত কাজের সঙ্গে জড়িত বিএনপি নেতাকর্মীদের শাস্তির দাবি জানাই।
আমতলী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব তুহিন মৃধা বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক কাজ। এমন বিতর্কিত কাজের সঙ্গে জড়িত বিএনপির যেই নেতাই হোক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম মামুন ভিপি বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। দলীয়ভাবে তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরিশাল বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। অভিযোগ পেলে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।