চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হলে আর হয়তো চশমার ওপর নির্ভর করতে হবে না। কারণ, বিজ্ঞানীরা এমন বিশেষ ধরনের আইড্রপস (চোখের ড্রপ) তৈরি করেছেন, যা দূরদৃষ্টির সমস্যায় ভোগা মানুষের দৃষ্টি ফেরাতে পারে।
সম্প্রতি কোপেনহেগেনে ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব ক্যাটারাক্ট অ্যান্ড রিফ্রাকটিভ সার্জনস (ESCRS)–এর সম্মেলনে উপস্থাপিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই ড্রপ ব্যবহারকারীরা চোখের চার্টে অতিরিক্ত লাইন পড়তে সক্ষম হয়েছেন এবং সেই উন্নতি টিকেছে দুই বছর পর্যন্ত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চল্লিশোর্ধ্ব বয়সীদের মধ্যে প্রচলিত ‘প্রেসবায়োপিয়া’ নামক চোখের সমস্যা দূরদৃষ্টির অন্যতম কারণ। এ সময়ে চোখের লেন্স শক্ত হয়ে যায়, ফলে কাছের জিনিস স্পষ্ট দেখা কঠিন হয়ে পড়ে। এ সমস্যার সমাধান হিসেবে সাধারণত চশমা বা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। তবে চশমা অনেকের কাছে ঝামেলাজনক, আর অস্ত্রোপচার সবার নাগালে নেই। নতুন এই আইড্রপস সেই সমস্যার সহজ সমাধান দিতে পারে বলে আশা করছেন গবেষকরা।
গবেষণার ফলাফল
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭৬৬ জন অংশগ্রহণকারীর ওপর পরীক্ষা চালানো হয়। প্রতিদিন সকালে ও ছয় ঘণ্টা পর বিশেষ আইড্রপসটি ব্যবহার করেন তারা। ড্রপসে পাইলোকারপিন ও ডাইক্লোফেনাক নামের দুটি উপাদান রাখা হয়। তিনটি ভিন্ন গ্রুপে রোগীদের ভাগ করা হয়, যেখানে ডাইক্লোফেনাকের পরিমাণ একই থাকলেও পাইলোকারপিনের ঘনত্ব ভিন্ন ছিল।
ড্রপস ব্যবহারের এক ঘণ্টা পর গড় হিসেবে রোগীদের দৃষ্টিশক্তি ৩.৪৫ লাইন পর্যন্ত উন্নত হয়।
আর্জেন্টিনার বুয়েনস আয়ার্সে প্রেসবায়োপিয়া বিষয়ক উন্নত গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ডা. জিওভানা বেনোজ্জি বলেন, ‘তিনটি ঘনত্বেই দ্রুত ও দীর্ঘস্থায়ী উন্নতি দেখা গেছে, যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফল।’
তথ্য অনুযায়ী, ১ শতাংশ পাইলোকারপিন ব্যবহারকারীদের ৯৯ শতাংশই কাছের লেখা সহজে পড়তে সক্ষম হন এবং অন্তত দুটি অতিরিক্ত লাইন পড়তে পারেন। ২ শতাংশ গ্রুপে ৬৯ শতাংশ এবং ৩ শতাংশ গ্রুপে ৮৪ শতাংশ রোগী অন্তত তিন বা ততোধিক লাইন পড়তে সক্ষম হন।
গবেষণায় আরও জানা গেছে, এই ড্রপস ব্যবহারের পর সাময়িকভাবে চোখ ঝাপসা দেখা, জ্বালা বা মাথাব্যথার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও এগুলো গুরুতর নয় এবং সহনীয় পর্যায়ের।
বিশেষজ্ঞরা এই সাফল্যকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে তারা জানিয়েছেন, বিষয়টি নিশ্চিত করতে আরও বিস্তৃত ও দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা চালানো জরুরি।
সূত্র: এনডিটিভি।