ইসরায়েলি সেনাদের ওপর রকেট হামলা চালিয়েছে লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধা হিজবুল্লাহ। দেশটিতে অন্তত চার জায়গায় ইসরায়েলি সেনাদের নিশানা করে হামলা চালানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তারা দক্ষিণ লেবাননের খালেত ওয়ারদেহ এবং মারজ এলাকায় অভিযান চালানো ইসরায়েলি বাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। এছাড়া ইসরায়েলের অধিকৃত শেবা ফার্মের লেবানন-সিরিয়া সীমান্তে আল-সাদানা এবং বিরকাত আল-নাক্কার এলাকাতেও সেনাদের নিশানা করা হয়েছে।
হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে এ হামলা চালানোর কথা বলা হলেও এতে হতাহতের কোনো খবর তাৎক্ষণিক জানা যায়নি।
আল-জাজিরার বিশ্লেষণ / ইরান সামরিক শক্তিতে এগিয়ে, তবুও ইসরায়েলের আগ্রাসনের কারণ কী?
এর আগে সোমবার বিবিসি জানায়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে হামলা চালিয়েছে লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধা হিজবুল্লাহ। এতে ইসরায়েলের চার সেনা নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৬০ জন।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে একটি সেনা ক্যাম্পে এ হামলা চালানো হয়েছে। ড্রোন দিয়ে এ হামলা চালানো হয়।
আইডিএফ আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলের হাইফা শহর থেকে ৩৩ কিলোমিটার দক্ষিণে বিনইয়ামিনা ঘাঁটির পাশেও হামলা হয়েছে। এতে ইসরায়েলের অন্তত সাত সেনা গুরুতর আহত হয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, হিজবুল্লাহ এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, তেল আবিব এবং হাইফার মাঝামাঝি এলাকায় আইডিএফের গোলানি ব্রিগেডের একটি প্রশিক্ষণ শিবিরকে তারা নিশানা করেছে।
হিজবুল্লাহর মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) রাজধানী বৈরুতে চালানো ইসরায়েলি হামলার জবাবে এ অভিযান চালানো হয়েছে।
বিবিসির এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে মধ্যপ্রাচ্য। গত এক বছরে বিশ্বে অনেক বিপদের মুহূর্ত এসেছে। তবে এবারেরটি সবচেয়ে ভয়াবহ। গত কয়েক দিন আগে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হয়েছেন। এরপর লেবাননে স্থল হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। জবাবে ইরান ইসরায়েলে প্রায় ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে।এরপর তেহরানে পাল্টা হামলা চালানোর ঘোষণা দিয়েছে তেলআবিব।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা ও আঞ্চলিক শক্তিগুলো উত্তেজনা কমানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ দ্রুত সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭ এর পক্ষ থেকে সব পক্ষকে ধৈর্য ধরতে বলা হয়েছে; কিন্তু এখন পর্যন্ত সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ। আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে মধ্যপ্রাচ্য সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে। গত এক সপ্তাহে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনার কারণে মূলত এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যায় লেবাননের বৈরুতে গত ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ইসরায়েল বোমা হামলা চালায়। সেখানে ব্যাপক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। অনেক আবাসিক ভবন ধসে পড়ে। মাটিতে বড় গর্ত সৃষ্টি হয়। আকাশ ধুলাবালি ও ধোঁয়ায় ভরে ওঠে। পুরো লেবানন থেকে ওই দৃশ্য দেখা যায়। এ হামলা হয় মাটির নিচে থাকা হিজবুল্লাহর বাংকার লক্ষ্য করে। এ হামলায় নিহত হন হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ। ইসরায়েলের এক সপ্তাহ ধরে চালানো হামলায় ৫০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার পর নাসরুল্লাহর মৃত্যুর খবর আসে।
তারও এক সপ্তাহ আগে এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে লক্ষ্য করে পর পর অসংখ্য ওয়াকি-টকি এবং পেজার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে কমপক্ষে ৩২ জন নিহত এবং তিন হাজার জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছিল।