রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে ফ্যাসিবাদ অত্যন্ত জটিল। একই সঙ্গে এটি নিয়ত পরিবর্তনশীলও। ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে প্রধান পুঁজি থাকে সামাজিক ক্ষোভ। অর্থাৎ, কোনো দেশ বা সমাজের মানুষ যখন নানা বিষয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, এক ধরনের সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষোভ ও উত্তেজনা দানা বাঁধতে থাকে, ঠিক সেই অস্থির সময়টাকে পুঁজি করে ফ্যাসিস্টরা। একে ভিত হিসেবে ব্যবহার করে ধীরে ধীরে এগোনো শুরু করে ফ্যাসিবাদ।
মানবসভ্যতার শুরুটা হয়েছিল মানুষের গোষ্ঠীবদ্ধতার মধ্য দিয়ে। গোষ্ঠী গঠন হওয়ার পরই আসে তার নেতৃত্ব দেওয়ার প্রসঙ্গ। এই প্রক্রিয়াতেই ধীরে রাজ্য বা সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন হয়। রাজা বা সম্রাটের শাসনকাল শুরু হয়। অতিসরলীকরণ মনে হলেও বংশানুক্রমিক শাসনের ইতিহাস এ রকমই। এরপর ধীরে ধীরে আসে গণতন্ত্রের ধারণা। আর এই ধারণাতেই স্বৈরাচার বা একনায়কের তত্ত্বের উদ্ভব, যদিও এমন শাসন তত্ত্ব সৃষ্টির আগেও ছিল। সেই একনায়কতন্ত্রেরই একটি চরম রূপ হলো ফ্যাসিবাদ।
১৯২০ থেকে ১৯৩০‑এর দশকে ইউরোপে এর প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ভব ও বিস্তার ঘটে। এবং তার প্রতিভূই মূলত হিটলার ও মুসোলিনি। মুসোলিনি এ ক্ষেত্রে ছিলেন অগ্রগামী সৈনিক। হিটলার তাঁর কাছ থেকে অনেক শিক্ষাই নিয়েছিলেন এবং নিজের স্বার্থে সেসব কাজেও লাগিয়েছিলেন। বিশেষ করে প্রোপাগান্ডা ও সহিংসতার বহুমুখী ব্যবহারের বিষয়টি মুসোলিনির কাছ থেকেই হিটলার আত্তীকরণ করেছিলেন বলে ধারণা করেন অনেক বিশ্লেষক। জার্মানি ও ইতালির পর ফ্যাসিবাদী আদর্শের ভিত্তিতে ইউরোপজুড়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন গঠিত হয়েছিল।
ফ্যাসিস্ট চিনবেন যেভাবেফ্যাসিস্ট চিনবেন যেভাবে
ফ্যাসিবাদের সংজ্ঞা আসলে অনেক। যেহেতু আগেই বলা হয়েছে যে, এই রাজনৈতিক আদর্শটি নিয়ত পরিবর্তনশীল এবং স্থান‑কাল‑পাত্রভেদে এর হরেক বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়, তাই ফ্যাসিবাদকে একদম নিখুঁতভাবে সংজ্ঞায়িত করা এবং এর মান সংজ্ঞা নির্ধারণ করা খুবই কঠিন। কিছু বিশেষজ্ঞ ফ্যাসিবাদ বলতে একগুচ্ছ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, একটি রাজনৈতিক দর্শন বা একটি গণআন্দোলনকে বুঝিয়ে থাকেন।
আবার অনেকে বলেন ফ্যাসিবাদ এমন একটি রাজনৈতিক আন্দোলন, যেটি উগ্র জাতীয়তাবাদ, সামরিকবাদ এবং ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রের সর্বাধিক ক্ষমতায়নকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তবে বেশির ভাগ সংজ্ঞাতেই ফ্যাসিবাদকে একনায়কতন্ত্রেরই আরেক রূপ হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছে। এটিও মেনে নেওয়া হয়েছে যে, ফ্যাসিবাদে উগ্র জাতীয়তাবাদের চর্চা আবশ্যিক এবং যেকোনো মূল্যেই একে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে।