1.9 C
Munich
Sunday, December 22, 2024

‘৪৫ দিন আমার কাছে কয়েক’শ বছরের মতো লেগেছিল’

জনপ্রিয় সংবাদ

‘কারাগারে যাওয়ার পর স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের চিন্তায় ঘুম আসতো না। বিদেশের কারাগার জীবনের বিভীষিকাময় দিনগুলোর স্মৃতি এখনও তাড়া করছে আমায়। ভাবতাম আইনি প্রক্রিয়ায় কে, কখন বের করবে। কখন পরিবারের কাছে দেশে ফিরব। মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ইউনূস স্যারের (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) প্রচেষ্টায় আমরা জেল থেকে মুক্ত হয়ে বর্তমানে দেশে আছি। ইউনূস স্যার না থাকলে এত কম সময়ে মুক্তি পেতাম না।’

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে সাংবাদিকদের কথাগুলো বলছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে আসা ফরিদ আহমদ শাহিন।

ফরিদ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চৌদ্দগ্রাম পৌর সদরের লক্ষ্মীপুর গ্রামের আলী আহমেদের ছেলে। গত ৭ সেপ্টেম্বর আমিরাতে দণ্ডিত হওয়ার পর ক্ষমাপ্রাপ্ত ৫৭ বাংলাদেশির মধ্যে ১৪ জন দেশে ফিরেছেন। তাদের একজন শাহিন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে শাহীন বলেন, গত ২০ বছর ধরে আরব আমিরাতের আইন মেনে বেশ সুনামের সঙ্গে দুবাই শহরে ব্যবসা করেছি। বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে একাত্বতা প্রকাশ করে গত ১৮ জুলাই দুবাইতে থাকা প্রবাসীরা স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে। আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ওই মিছিলে অংশ নিয়েছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম স্বৈরাচার হাসিনা আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের বুকে আর একটাও যেন গুলি না চালায়। আমরা জানতাম প্রতিবাদ করলে রাজতন্ত্র আইনে আমাদের শাস্তি হবে। সেই শাস্তির শঙ্কা উপেক্ষা করেই আমরা আন্দোলনে নেমেছিলাম।

আরও পড়ুনঃ  লন্ডন থেকে ঢাকায় ফেরানো হচ্ছে হাইকমিশনার সাইদা মুনাকে

তিনি বলেন, পরদিন ওই দেশের পুলিশ আন্দোলনরত বাঙালিদের গ্রেপ্তার করে। পরে দ্রুত সময়ের মধ্যে যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। আমরা খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পর কোনো উপায় দেখছিলাম না। সারাক্ষণ পরিবারের দুশ্চিন্তায় সময় কেটেছে। কারাগারে অবিরত চোখের পানি ফেলেছি।

শাহিন আরও বলেন, ৪৫ দিন আমার কাছে কয়েক শ বছরের মতো লেগেছিল। সময় যেন ফুরাচ্ছিল না। জেলে বন্দি থাকা অবস্থায় হঠাৎ একদিন শুনলাম আমাদের মুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশের সরকার আমিরাতের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। বিশ্বাস করুন- সঙ্গে সঙ্গে সিজদায় পড়ে গেছি। তার কয়েকদিন পর শুনলাম আমিরাতের রাষ্ট্রপতি আমাদের সাধারণ ক্ষমা করে মুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। জীবনে বড় আনন্দের খবর আমার কাছে সেটিই ছিল। ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেষ করা যাবে না।

আরও পড়ুনঃ  শহীদের রক্তে ধোয়া ইমারত পানিতে ভেসে যেতে দেব না : ঢাবি শিবির সভাপতি

তিনি আরও বলেন, ৫৭ জনকে সাজা দেয়ার খবর প্রকাশিত হলেও সাজাপ্রাপ্তদের প্রকৃত সংখ্যা ১১৪। সরকারের কাছে আমার অনুরোধ- বাকি যে ৫৭ জন বাঙালি বন্দি আছেন, তাদের মুক্ত জন্য যেন উদ্যোগ নেয়া হয়।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সমর্থনে ও শেখ হাসিনার সরকারের দুঃশাসনের প্রতিবাদে দুবাই, শারজাহ, আজমানের বিভিন্ন এলাকার সড়কে বিক্ষোভ করেছিলেন বাংলাদেশিরা। রাজতন্ত্রের দেশটিতে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকায় বিক্ষোভ থেকে আটক করা হয় অনেককে। তাদের মধ্যে তিনজনকে যাবজ্জীবন, একজনকে ১১ বছর এবং ৫৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন দেশটির আদালত।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এই রায়কে মানবাধিকার লঙ্ঘন বললেও হাসিনা সরকার স্পষ্ট করে জানিয়েছিল, দণ্ডিতদের মুক্ত করতে পদক্ষেপ নেয়া হবে না। তৎকালীন প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেছিলেন, যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-বিএনপির প্রেতাত্মারা কৃতকর্মের শাস্তি পেয়েছে। দুবাইয়ে আন্দোলন করে তারা বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। এজন্য তাদের শাস্তি হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  মাইকে ঘোষণা দিয়ে ফিল্মি স্টাইলে পালিয়ে গেলেন যুবলীগ নেতা

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ প্রথম সভাতেই দণ্ডিত বাংলাদেশিদের মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। আইনজীবী নিয়োগ করে আপিল প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রধান উপদেষ্টা কথা বলেন আমিরাতের সরকারপ্রধানের সঙ্গে। পরে ৫৭ বন্দি ক্ষমা পান।

সর্বশেষ সংবাদ