1.3 C
Munich
Monday, December 23, 2024

মানিকগঞ্জে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর ১০ কোটি টাকার বাগানবাড়ি!

জনপ্রিয় সংবাদ

১৯০ শতাংশ জমিতে দ্বিতল ভবনসহ দৃষ্টিনন্দন বাগানবাড়ি বানিয়ে মানিকগঞ্জে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন তৃতীয় শ্রেণির এক সরকারি কর্মচারী। নাম আব্দুল বারেক। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী তিনি। তিনি কোটি কোটি টাকা খরচা করে বাগানবাড়ি বানিয়ে সেটির নাম দিয়েছেন ‘ক্ষণিকের নীড়’।

আব্দুল বারেকের চাকরি থেকে অবসরের সময় রয়েছে আর মাত্র তিন মাস। তার স্বজন ও স্থানীয়দের দাবি, অবৈধ পন্থায় কামানো টাকা দিয়ে আব্দুল বারেক বাগানবাড়িটি বানিয়েছেন।

স্থানীয় ও সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার উকিয়ারা গ্রামের ইয়াছিন আলীর ছেলে আব্দুল বারেক। বাবা-মায়ের পারিবারিক কলহে ছোটবেলায় পড়াশোনা করেছেন সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি এতিম খানায়। বাবার সঙ্গে তার মায়ের বিচ্ছেদের পর দিয়ারা গোলড়া গ্রামে নানার বাড়ির পক্ষ থেকে ১৮ শতাংশ জমিতে তার মাকে বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল একটি বাড়ি।

১৯৮৮ সালে আব্দুল বারেক দৌলতপুর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে যোগ দেন সার্টিফিকেট সহকারী হিসেবে। এরপর তিনি মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে চাকরি করেছেন। বর্তমানে তিনি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী।

সদর উপজেলার জাগীর ইউনিয়নের দিয়ারা গোলড়া গ্রামে ১ একর ৯০ শতাংশের জমি ও স্থাপনাসহ ওই বাগানবাড়ির বাজারমূল্য অন্তত ১০ কোটি টাকা। এছাড়াও তার নামে বেনামে রয়েছে আরও কোটি টাকার সম্পদ। তৃতীয় শ্রেণির এই কর্মচারীর দুনীতির সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচারের দাবি এলাকাবাসীর।

আরও পড়ুনঃ  আসছেন ডোনাল্ড লু, ঢাকা ইস্যুতে দিল্লিকে বার্তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র

সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর উপজেলার জাগীর ইউনিয়নের দিয়ারা গোলড়া গ্রামে ১ একর ৯০ শতাংশ জমির উপর আব্দুল বারেক বানিয়েছেন দৃষ্টিনন্দন একটি বাগানবাড়ি। সেখানে দ্বিতল ভবন, একতলা একটি ভবন, দেয়ালপাকা টিনসেড একটি ঘর, দুটি টিনের ঘর, খেলার মাঠ, বাড়ির ভেতরে অসংখ্য সংযোগ ইটসলিং রাস্তা ও চারপাশ পাকা দেয়ালসহ বিভিন্ন ফলজ, বনজ ও বাহারি রকমের ফুলের গাছ। জমি ও স্থাপনাসহ বাগানবাড়িটির বাজারমূল্য অন্তত ১০ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে আব্দুল বারেকের মামা জালাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি নিজে বারেকের বাবার বাড়ি থেকে সাড়ে তিন বিঘা জমিসহ ওর মাকে নিয়ে আসি এবং আমাদের এলাকায় ১৮ শতাংশ জমির উপর একটি টিনের বাড়ি করে দেই। পরে বারেককে সাটুরিয়ার একটি এতিমখানায় রেখে পড়াশোনা করানো হয়। কিছুদিন পরে অবশ্য ওই সাড়ে তিন বিঘা জমি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা বিঘাপ্রতি বিক্রি করে। সেই বারেক বাটোয়ারা মামলা দিয়ে আমাদেরকেই হয়রানি করেছে। এখন তো বিশাল বাগানবাড়ি করছে।’

আরও পড়ুনঃ  উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত হচ্ছেন আরও ৫ জন, আলোচনায় যারা

দিয়ারা গ্রামের ফুলচাঁন জানান, বারেক আমাদের দেশে যখন আসে তখন মামার বাড়ির দেওয়া বাড়ি ছাড়া কিছুই ছিল না। এতিমখানা থেকে পড়াশোনা করে এসে ডিসি অফিসে একটি চাকরি করতো। মানুষের অর্থসম্পদ আত্মসাৎ ও দুর্নীতি করে ১০ কোটি টাকার উপরে সম্পদের মালিক হয়েছে। আমার ঘরবাড়ি পুড়াইছে, গরু-বাছুরসহ টাকাপয়সা লুট করছে এবং আমার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে ১০ বার জেল খাটাইছে। আমি বারেকের সঠিক বিচার চাই।’

স্থানীয় আব্দুস ছাত্তার জানান, ‘আব্দুল বারেক অবৈধভাবে জমি হাতিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। তিনি এই চাকরির বেতনের টাকা দিয়ে সংসার চালানোর খরচ নির্বাহের পাশাপাশি লাখ লাখ টাকা দিয়ে পাঁচ মেয়েকে ঢাকায় পড়িয়েছেন। এতিমখানায় বড় হওয়া তৃতীয় শ্রেণির এই কর্মচারীর বেতন কত? সেখানে ১০ কোটি টাকার বাগানবাড়ি ও আরও কোটি টাকার সম্পদ কীভাবে করলো। আমার চার শতাংশ জমিতে জোরপূর্বক পাকা দেয়াল করছে। প্রশাসনের এ ব্যাপারে সঠিক তদন্ত করা উচিত।’

দিয়ারা গোলড়ার শরীফ জানান, ‘বারেক ডিসি অফিসসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কেরানী থাকা অবস্থায় প্রশাসনের ছত্রছায়ায় নানা দুর্নীতি করেছে। ঘুস খাইছে এবং অবৈধভাবে অনেক টাকা উপার্জনের মাধ্যমে ১ একর ৯০ শতাংশের উপর বিশাল বাগানবাড়ি করেছে। আমাদের এমপি-মন্ত্রীসহ মানিকগঞ্জ জেলায় এমন বাগানবাড়ি আছে কিনা সন্দেহ। আমাদের চার বিঘা জমি বাবদ ব্যাংক ঋণ ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ করার কথা বলে আত্মসাৎ করেছেন। পরে সেই ঋণ সুদসহ গত বছর আমরা ৬০ হাজার টাকা দিয়ে পরিশোধ করলেও আমাদের সেই জমি আর ফেরত দেয়নি। আমি সরকারের কাছে বিচার চাই।’

আরও পড়ুনঃ  সকাল ৯টার মধ্যে ৮০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস

এসব ব্যাপারে আব্দুল বারেক বলেন, ‘আমি মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে অফিস সহকারী হিসেবে সততার সঙ্গে চাকরি করেছি। আমার সম্পদের বিবরণী জমা দেওয়া আছে। আমার বিষয়ে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা সত্য নয়।’

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটন ঢালী বলেন, ‘আব্দুল বারেক সম্প্রতি আমাদের এখানে যোগদান করেছে। কোনো দপ্তরে অভিযোগ হলে তাদের তদন্ত কাজে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। বারেক সাহেবের যে বেতন তা দিয়ে ১০ কোটি টাকার সম্পদ করা সম্ভব না। তবে অনেকেরই পারিবারিক সম্পদ থাকে। কোনো সম্পদ অবৈধভাবে করে থাকলে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ সংবাদ