প্রযুক্তিখাতে দক্ষ জনবল গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা হয় শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব। কিন্তু প্রতিষ্ঠার কিছুদিনের মধ্যেই বেশিরভাগ ল্যাবই হয়ে পড়ে অচল। কেননা এসব ল্যাবে যা বরাদ্দ ছিল তা খরচ করা হয়নি সিকিভাগও। ফলে শিক্ষার্থীদের ভাগ্য না বদলালেও অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে পাল্টে গেছে প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের ভাগ্য।
এই প্রকল্পসহ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীনে গেলো দেড় দশকে অর্ধশতাধিক প্রকল্পের আওতায় সরকারের ব্যয় প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা। সরকারি নিরীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, এসব প্রকল্পের প্রায় প্রতিটিই নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে ভরা। দুর্নীতির এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিতেন খোদ মন্ত্রণালয়টির সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। গেলো এক দশক থেকে সেই সিন্ডিকেটের স্বক্রিয় সদস্য রেজাউল মাকছুদ জাহেদী।
বিসিএস ১৩ তম ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের এই কর্মকর্তার চাকুরি জীবনের এক দশকই কেটেছে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নিবিড় সান্নিধ্যে। উপ-পরিচালক থেকে যুগ্মসচিব পর্যন্ত পদোন্নতিও হয় একই দপ্তরে। সবশেষ অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির জন্য ডিও লেটারও দেন পলক। কিন্তু নিজস্ব জনবল দিয়ে সুরক্ষা অ্যাপস তৈরিতে প্রধামন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশ অমান্য করে সিন্ডিকেটের স্বার্থ রক্ষায় ৩৬০ কোটি টাকা ব্যয়ের উদ্যোগ নেন তিনি। যা নজরে এলে আটকে যায় পদোন্নতি, বদলি করা হয় তথ্যপ্রযুক্তি অধিদপ্তর থেকেও।
৯৭৭ কোটি টাকার শেখ রাসেল ডিজিটাল প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপের কার্যক্রম নিয়ে সরকারের নিরীক্ষা প্রতিবেদন বলছে, টেন্ডারের শর্ত পাল্টে ৬০৪ কোটি টাকায় কেনা হয় নিম্নমানের ল্যাপটপ ও অন্যান্য যন্ত্রণাংশ। প্রকল্পের আওতায় ডিজিটাল ল্যাবে সিআরআইর সমন্বয়ক তন্ময় আহমেদের তত্ত্বাবধানে কোম্পানিকে ১৪১ কোটি টাকার দেয়া হয় নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই।
এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তারা নামে বেনামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলে এসব অনিয়মগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার চেষ্টা করেছে।
১৮ অক্টোবর শেখ রাসেল দিবস উদযাপন, শেখ রাসেল পুরস্কার প্রবর্তন, ডিজিটাল মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জীবনী জানার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু অ্যাপ তৈরি,অডিও ও ভিডিও বই তৈরি করে ডিজিটাল মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রচার, অ্যানিমেশন তৈরি, শতমনে বঙ্গবন্ধু শীর্ষক সাক্ষাতকারধর্মী ডকুমেন্টারি তার সৃষ্টিশীল ভাবনার ফল।
জুনাইদ আহমেদ পলকের ঘনিষ্ঠ এই কর্মকর্তা আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বঞ্চিত সেজে দুই দফা পদোন্নতির পর বাগিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিবের পদ। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে রেজাউল মাকছুদ জাহেদীসহ প্রযুক্তিখাতে অনিয়মে জড়িতদের প্রমাণ থাকলেও এতদিন তা আমলে নেয়া হয়নি।
গত ৫ আগস্টের পর সংস্কারের প্রত্যাশা তৈরি হলেও তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে অনিয়ম দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি-পদায়নের মাধ্যমে।