0.2 C
Munich
Monday, December 23, 2024

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নিয়ে যা জানালেন ড. ইউনূস

জনপ্রিয় সংবাদ

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি: ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস
ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ বা আগামী নির্বাচন কবে হবে, এ নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা আলোচনা করেছি।

কিন্তু সিদ্ধান্ত নিইনি।
গত শুক্রবার জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণ শেষে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ভয়েস অব আমেরিকা বাংলাকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো সম্পন্ন করার মাধ্যমে দেশে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে যেন সক্ষম হয়, সেজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে দৃঢ় সমর্থন দিয়ে যাওয়ার কথা জানান বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। গত ২৩ সেপ্টেম্বর বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান।

১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে- এ কথা থেকে কি ধরে নেওয়া যায় যে, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ হবে ১৮ মাস, এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আপনি ইচ্ছা করলে ধরতে পারেন। কিন্তু, সরকারের মতামত তো না সেটা।

সরকার তো কোনো মত দেয়নি এ পর্যন্ত। কাজেই সরকার কখন মেয়াদ ঠিক করবে, সেটা সরকারকে বলতে হবে। সরকার না বলা পর্যন্ত সেটা তো সরকারের মেয়াদ হচ্ছে না।
বিষয়টি পরিষ্কার করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান আরও বলেন, আমাদেরই বলতে হবে। আমাদেরকেই বলতে হবে। আমাদের মুখ থেকে যখন শুনবেন তখন সেটাই হবে তারিখ।

আরও পড়ুনঃ  জানা গেলো উপদেষ্টা হাসান আরিফের জানাজা

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে এ বছরের ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন। সেই থেকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের একটি দৃশ্যমান টানাপোড়েন দেখা যাচ্ছে।

বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনার বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ প্রসঙ্গে ইউনূস জানান, এটি একটি আইনি বিষয় এবং আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাংলাদেশ শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইবে।

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দুই দেশেরই স্বার্থ হলো অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, মধুর সম্পর্ক গড়ে তোলা। মাঝে মাঝে কতগুলো প্রশ্ন এসে যায়, যেখানে সম্পর্কে একটু চির ধরে। যেমন সীমান্তে গুলি করল, বাচ্চা মেয়ে মারা গেল, বাচ্চা ছেলে মারা গেল, এগুলো মনে কষ্ট দেয়। … আমরা মনে করি না যে ভারতের সরকার ইচ্ছা করে এসব করেছে। যেসব কারণে এসব ঘটে, সেগুলো যেন আমরা উৎখাত করতে পারি, যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, যাতে নিরাপদে মানুষ জীবন নিয়ে চলাফেরা করতে পারে।

আরও পড়ুনঃ  শাহজালাল বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন নিয়ে যা জানা গেল

বাংলাদেশের এ সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে ছিল ছাত্ররা। অন্তর্বর্তী সরকারেও ছাত্রদের প্রতিনিধি রয়েছে। তবে সরকারের বাইরে যারা আছে, এমন অনেক ছাত্রকে দেশের নানা ক্ষেত্রে, নানা প্রতিষ্ঠানে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে দেখা যাচ্ছে।

শিক্ষার্থীরাই দেশ চালাচ্ছে কি না- এমন এক প্রশ্নের জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, চালানো উচিত বলছি। চালাচ্ছে বলছি না। চালানো উচিত। তরুণদের হাতে ছেড়ে দেওয়া, আমি বরাবরই বলে এসেছি, এখানে এ দায়িত্ব পালন করার আগে থেকেই বলছি যে তরুণদের হাতে, কারণ তারাই তাদের ভবিষ্যৎ রচনা করবে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সেনাবাহিনীকে দুই মাসের জন্য ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। সমাবেশ হচ্ছে। তাতে, বিশেষ করে আমাদের পোশাক শিল্প কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে। সেগুলো নিয়ে মনে করলাম যে, এভাবে চলতে দিলে তো বাড়তে আরম্ভ করবে, তখন এ প্রসঙ্গ উঠলো যে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়ার জন্য। …তারা বলছে আমরা তো আছিই কিন্তু, আমাদেরকে তো কেউ পরোয়া করছে না। কারণ আমাদের তো কোনো ক্ষমতা নেই। আমাদের একটা ক্ষমতা থাকলে তারা হয়তো আমাদের গণ্য করবে…তখন আমরা তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিলাম।

আরও পড়ুনঃ  বিচারের আগে আ.লীগের মাঠে থাকার সুযোগ নেই: উপদেষ্টা নাহিদ

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলো, বিশেষ করে পুলিশ হত্যার ঘটনাগুলোর তদন্ত-বিচার করা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যে যেখানে অপরাধ করেছে তার বিচার হবে। তা না হলে তো বিচার সম্পন্ন হবে না।

এ সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৭১-এর যুদ্ধাপরাধের জন্য পাকিস্তান সরকারের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া, সার্ক পুনরায় কার্যকরভাবে চালু করার বিষয়ে পাকিস্তান, নেপাল, ভুটানের সঙ্গে জাতিসংঘ অধিবেশনের ব্যস্ততার ফাঁকে আলোচনা করা, সংবিধান সংস্কারসহ নানা ক্ষেত্রে সংস্কারের বিষয়ে তার সরকারের উদ্যোগ ও অগ্রগতি, বাংলাদেশের পার্বত্য জেলাগুলোতে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে বাঙালিদের সাম্প্রতিক সংঘর্ষ ও সহিংসতা, রোহিঙ্গা সংকট ইত্যাদি বিষয়েও কথা বলেন।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা সংস্কার করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ছয়টি কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন। সংস্কারের ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন জনপ্রশাসন ও সংবিধান।

ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে একটি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজন করা তার সরকারের মূল লক্ষ্য।

সর্বশেষ সংবাদ