6.7 C
Munich
Saturday, November 2, 2024

যে মেলায় জীবনসঙ্গী খুঁজে নেন তরুণ-তরুণীরা

জনপ্রিয় সংবাদ

সারি সারি দোকানপাট, মাঠভর্তি মানুষ। দেখে মনে হবে ঠিক যেন পুরদস্তুর গ্রামীণ মেলা। তবে এ মেলা অন্য কয়েকটি মেলার মতো নয়।

এমন চিত্র দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার গোলাপগঞ্জ বাজারে জীবন সঙ্গী মেলায়। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীদের জীবন সঙ্গী খোঁজার এই মেলা হয়ে আসছে প্রায় ২০০ বছর ধরে।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) দিনব্যাপী চলা এ মেলায় কয়েক হাজার মানুষের আগমন ঘটে। প্রতি বছর দুর্গাপূজার দশমীর পর দিন এ মেলার আয়োজন করা হয়।

বীরগঞ্জের গোলাপগঞ্জে উপজেলা আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির আয়োজনে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের এই মিলনমেলাটির আয়োজন হয়।

মেলায় আসা তরুণ-তরুণীদের পছন্দ হলে তারা পরিবারকে জানায়। এরপর পরিবারের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তাদের বিয়ে দেয়। তবে আয়োজকরা জানিয়েছেন, এই মেলা এক সময় বউ মেলা নামে পরিচিত ছিল।

মঙ্গলবার সকাল থেকে গোলাপগঞ্জ বিদ্যালয়ে দিনাজপুর, রংপুর, রাজশাহী, নওগা, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারীসহ আশপাশের জেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা আসতে শুরু করেন। দুপুরের পর থেকেই জমজমাট হয়ে উঠে পুরো মাঠ। দিনব্যাপী চলা ব্যতিক্রমধর্মী এই মেলায় কয়েক হাজার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আগমন হয়।

আরও পড়ুনঃ  প্রশাসনে অস্থিরতার জন্য এক উপদেষ্টা'কে দায়ী করলেন সারজিস

আয়োজকরা জানান, প্রতি বছর দুর্গাপূজার দশমীর পরদিন কোনো ধরনের প্রচার-প্রচারণা ছাড়াই হাজার হাজার মানুষ মেলায় উপস্থিত হন। মেলায় আশপাশের জেলার বিভিন্ন গ্রামের বউ, শাশুড়ি, ননদরা একত্রিত হন। মেলা থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তরুণ-তরুণীরা জীবন সঙ্গী বেছে নেন। পরে পরিবারিকভাবে দুই পরিবারের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে বিয়ে হয়।

স্থানীয়রা জানান, এই মেলায় এসে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তরুণ-তরুণীরা তাদের পছন্দের মানুষকে খুঁজে হাত ধরে টেনে বাড়িতে নিয়ে যেতেন। এরপর বাড়িতে ওই তরুণ-তরুণীর বিয়ে হতো। তবে এখন বিষয়টিকে ইভটিজিংয়ের পর্যায়ে পড়ে। তাই সেই পুরোনো প্রথা ভেঙে এখন নিয়ম করা হয়েছে, পছন্দ হলে দুই পরিবারের সদস্যদের জানাতে হবে। এরপর দুই পরিবারের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন করা হয়। যারা এই মেলায় নিজেরা জীবনসঙ্গী পছন্দ করত পরবর্তী বছর মেলায় তাদের নাম-পরিচয় তুলে ধরা হতো। এখনো এই মেলায় অনেকে পরিবারের সম্মতিতে পছন্দের পাত্র-পাত্রীকে নিয়ে এসে বিয়ে দিয়ে থাকেন।

জেলার কাহারোল উপজেলার কামোর গ্রাম থেকে আসা রমেশ চন্দ্র রায় বলেন, গোলাপগঞ্জ মিলনমেলার কথা অনেকবার শুনেছি। এবারে প্রথমবারে আসলাম পরিবারসহ। এসে খুব ভালো লাগল। আমার মেয়ে আছে, স্ত্রী আছে। যদি কোনো ছেলে পছন্দ হয়, জামাই তো করতেই হবে।

আরও পড়ুনঃ  তসলিমা নাসরিন কি মারা গেছে?

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা থেকে মেলায় ঘুরতে এসেছেন ১৯ বছর বয়সী তরুণী মনিকা হাসদা। তিনি বলেন, আমরা পুরো পরিবার মেলায় আসছি। মেলার বিষয়ে অনেকের মুখে অনেক কথা শুনেছি। কিন্তু আজকে বাস্তবে দেখা হলো। খুব ভালো লাগল।

ঠাকুরগাঁও থেকে আসা মেরী বলেন, আমরা আদিবাসী সাঁওতাল। মেলাটা আমাদের প্রতি বছরই হয়, প্রতি বছরই আমরা আসি। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে আসে মানুষ। আসলে ছেলে ও মেয়েদের দেখা সাক্ষাৎ হয়। এখানে বিয়ে হয় না, এখানে মেয়েদের ও ছেলেদের দেখা হলে ভালো লাগলে প্রস্তাবের মাধ্যমে বিয়ে হয়। আমাদের সমাজের মাধ্যমে বিয়ে হয়।

বীরগঞ্জ উপজেলার মাকড়াই এলাকার রিহুম হেমব্রম বলেন, এখানে অনেক ছোট থেকে আসা হয়। আমরা ৯ জন এসেছি। এর মধ্যে আমাদের এক মেয়েকে পছন্দ করেছে জুহিয়াল মুরমু নামে ফুলবাড়ী উপজেলার আমবাড়ি এলাকার এক ছেলে। আগামী জানুয়ারিতে তাদের বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  প্রত্যেককেই আমি শিক্ষা দিয়ে ছাড়বো আর আমি যেটা বলি আমি করি

বীরগঞ্জ আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির কোষাধ্যক্ষ জুলি মুর্মু বলেন, আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতি বছরই এই মেলার আয়োজন করা হয়। প্রতি বছর দুর্গাপূজার দশমীর পরদিন এই মেলার আয়োজন করা হয়। তবে আগে এই মেলাটিকে বাসিয়া মেলা বা বউ মেলা বলা হতো। এই মেলাটি উত্তরবঙ্গের আদিবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মেলা। উত্তরাঞ্চলের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা থেকেই আমাদের সম্প্রদায়ের মানুষজন এখানে আসেন।

বীরগঞ্জ আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির সাধারণ সম্পাদক কমলা কান্ত হাসদা বলেন, প্রায় ২০০ বছর ধরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আমরা বাবা-দাদার কাছ থেকে এই মেলার বিষয়ে শুনে এসেছি। প্রতি বছর আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন এই মেলার অপেক্ষায় থাকেন।

তিনি বলেন, এই মেলা এক ধরনের মিলনমেলা। সে সঙ্গে এখন এই মেলা জীবনসঙ্গী খোঁজার মেলা হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে। এই মেলায় শুধু বাংলাদেশেরই নয়, ভারত থেকেও লোকজন মেলাতে আসে। এখানে যে কোনো প্রান্তের তরুণ-তরুণী নিজেদের পছন্দ করে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে।

সর্বশেষ সংবাদ