নাটোরে এক ওয়ার্ড বিএনপি নেতাকে চিনতে না পারার অপরাধে চিকিৎসককে পিটিয়েছেন ওই নেতা ও তার সহযোগীরা। হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে চিকিৎসককে এমন মারধরের ঘটনার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক এবং নার্সসহ অন্যান্য স্টাফরা। অভিযুক্ত হিটলু নাটোর জেলা বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতার ভাই।
গত মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) রাতে আধুনিক সদর হাসপাতালের ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. রফিকুল ইসলামকে হাসপাতালে কর্তব্যরত থাকা অবস্থায় তার নিজ কক্ষের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিয়ে মারধর করে নাটোর পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. হিটলু।
রাতেই হামলার শিকার ভুক্তভোগী ওই চিকিৎসক বিষয়টি লিখিতভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সিভিল সার্জনকে জানিয়েছেন। এরপর চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে নাটোরের সিভিল সার্জন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশ। এরপর বুধবার দুপুরে চিকিৎসকের ওপর হামলার প্রতিবাদে অন্যান্য চিকিৎসক এবং স্টাফরা মানববন্ধন করতে গেলে তাদেরকে জোরপূর্বক মানববন্ধন করতে বাঁধা দেয় জেলা বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পরে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহিন, নবাব সিরাজউদ দৌলা সরকারী কলেজের সাবেক জিএস ও জেলা ছাত্রদল নেতা শহিদুল্লাহ সোহেলসহ বিএনপি ও যুবদল নেতাদের উপস্থিতিতে দোষ স্বীকার করে লিখিত ভাবে ক্ষমা চেয়েছেন অভিযুক্ত বিএনপি নেতা হিটলু।
জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে এসে একজন রোগীর বিষয়ে জানতে চান হিটলু। এসময় তাকে চিনতে না পারার কারণে রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে হিটলু এবং তার ৫-৬ জন সহযোগী বেধড়ক মারধর করে চলে যায়। পরে রাতে হিটলুসহ বিএনপি নেতারা হাসপাতালে এসে তাকে চাপ দিয়ে মিমাংসা করতে বলে। বিএনপি নেতাদের চাপে তিনি ক্ষমা করেছেন বলে জানান। এরপর বুধবার দুপুরে সদর হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা একত্রিত হয়ে মানববন্ধনের আয়োজন করতে গেলে বিএনপি নেতারা মানববন্ধন না করতে স্বশরীরে হাজির হয়ে নিষেধ করেন।
চিকিৎসককে মারধরে বিষয় অস্বীকার করে অভিযুক্ত হিটলু জানান, হাসপাতালের একজন চিকিৎসকের সঙ্গে তার ভুলবুঝাবুঝি হয়েছিলো। পরে নিজেরা বসে মিমাংসা করে নিয়েছেন।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন জানান, তিনি জেলার বাইরে আছেন। কর্তব্যরত একজন চিকিৎসককে মারধরে ঘটনা ঘটার পরে তিনি লিখিতভাবে জানালে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। পরে অভিযুক্ত এবং তার দলের নেতারা এসে ক্ষমা চাইলে উপস্থিত চিকিৎসকরা আপোষ করেছেন।
নাটোর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাহাবুর রহমান জানান, চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি করে সিভিল সার্জন। পরবর্তীতে অভিযুক্ত ব্যক্তির একটি লিখিত ক্ষমা প্রার্থনা পত্র দেয় সিভিল সার্জন। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।