টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দান দখলকে কেন্দ্র করে মাওলানা যোবায়ের ও সাদপন্থিদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনজন নিহত এবং আহত হয়েছেন প্রায় শতাধিক।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, সব ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে শান্ত ও ধৈর্য ধারণ করার জন্য অনুরোধ করছি। কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা না করে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য আহ্বান করছি। তাবলিগ একটি দ্বীনি ও ধর্মীয় ইস্যু। ফলে আমরা মনে করি, তাবলিগসহ ধর্মীয় সব বিষয়াদি ওলামায়ে কেরামের মাধ্যমেই সুরাহা ও মীমাংসিত হবে।
তিনি বলেন, সমগ্র বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা রক্ষার দায়ভার আমাদের প্রত্যেকটি নাগরিকের। দেশের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে শান্তিপূর্ণ সমাধান ও অবস্থানের জন্য আমরা সবাই আন্তরিকভাবে কাজ করে যাবো।
হাসনাত বলেন, সাদপন্থি সমর্থিত ‘সচেতন ছাত্র সমাজের’ দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি এবং সকাল ১০টার মধ্যে মাওলানা সাদের ভিসার জন্য বাসভবন ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণার কারণে আমরা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সাদপন্থিদের সাথে আলোচনার জন্য টঙ্গী যাই। সেখানে আলোচনা শেষে তারা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন এবং মাওলানা সাদের ভিসা জটিলতা নিরসনে পুনরায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
তিনি বলেন, আলোচনায় আমরা এটাও স্পষ্ট করি যে, এগুলো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়। এ বিষয়ে কাকরাইলে মাওলানা জুবায়ের সাহেব এবং ওলামায়ে কেরামের সাথে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সে পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে হবে। এ উদ্দেশ্যে মঙ্গলবার রাত ২টায় কাকরাইলে আলোচনার জন্য যাই। সেখানে মাওলানা মাহফুজুল হক ও মাওলানা মামুনুল হকসহ অন্য আলেমরা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, সেখানে পৌঁছানোর পর সাদপন্থি একজন মুফতির একটি পোস্ট আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়, যেখানে খণ্ডিত ভিডিও প্রচার করে বলা হয়েছে আমরা নাকি তাদের জোর করার অনুমতি দিয়েছি। এটি আমাদের সিদ্ধান্তের সম্পূর্ণ বিপরীত।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এ নেতা বলেন, কাকরাইলে আলোচনাকালীন সেখানে আলেমদের উপস্থিতিতে আমরা তাদের স্পষ্টভাবে জানিয়েছি যে, আমরা কোনো কর্তৃপক্ষ নই। আমরা আলোচনা করে কাকরাইল থেকে টঙ্গী গিয়ে কথা বলব এবং এরপর পারস্পরিক মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
তিনি বলেন, আলোচনার মাঝেও সাদপন্থি ওই মুফতিকে ফোন দিয়ে বলেছি, আপনারা যদি সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার আগে ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ করেন, তাহলে আমাদের সাথে আপনাদের সম্পর্ক থাকবে না। আমরা কাকরাইলে আলেমদের উপস্থিতিতে সাদপন্থিদের আরও বলেছি, কোনোভাবেই আপনারা ময়দানে প্রবেশ করবেন না এবং আমাদের নিয়ে যে ভিডিও প্রচার করেছেন, তা মুছে ফেলবেন। কিন্তু এর আগেই এই নির্মম ঘটনা ঘটেছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।
এর আগে বুধবার ভোর রাত থেকে দুপক্ষের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার এগারসিন্দু গ্রামের বাসিন্দা বাচ্চু মিয়া (৭০) ও ঢাকার দক্ষিণখানের বেড়াইদ এলাকার বেলাল (৬০) ও বগুড়ার তাজুল ইসলাম (৭০)।
স্থানীয়রা জানান, রাত ৩টার দিকে সাদপন্থিরা তুরাগ নদীর পশ্চিম তীর থেকে কামারপাড়া ব্রিজসহ বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ করতে থাকে। এ সময় ময়দানের ভেতর থেকে যোবায়েরপন্থিরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। জবাবের সাদপন্থিরাও পাল্টা হামলা চালায়। এক পর্যায়ে সাদপন্থিরা ময়দানে প্রবেশ করলে উভয়পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে বহু হতাহত হয়।