অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরপরই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। দলটি তাদের অফিসগুলো খুলে আবার কার্যক্রম শুরু করেছে। দলের প্রধান বা আমির ডা: শফিকুর রহমান তার যুক্তিপূর্ণ ও মিতভাষী বক্তব্যের জন্য সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে প্রশংসা অর্জন করেছেন।
ভবিষ্যৎ নির্বাচনে জামায়াতের অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এটি কি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সাথে জোটের অংশ হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে? জামায়াতে ইসলামী আছে এমন একটি সরকারের অধীনে শাসন কেমন হবে? এটা কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হবে? এসব প্রশ্নের উত্তর পেতেই দি ডিপ্লোম্যাট জামায়াত প্রধানের সাক্ষাৎকার নেয়। সাক্ষাৎকারে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে জামায়াতের আমির বলেছেন, তার দল দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আপসহীন।
প্রশ্ন : এক দশকেরও বেশি সময় পরে, জামায়াত তার অফিসে ফিরে এসেছে। আপনার দল এবং বাংলাদেশের জনগণের জন্য এই নতুন স্বাধীনতা আপনি কেমন অনুভব করেন?
উত্তর : নতুন স্বাধীনতা সম্পর্কে জামায়াতে ইসলামী কেমন অনুভব করে তা বলার করার আগে, জাতি কেমন অনুভব করে তা ব্যাখ্যা করতে চাই। বিগত সরকারের আমলে শুধু আমরাই নির্যাতিত ছিলাম তা নয়। হ্যাঁ, জামায়াত তাদের নিপীড়নের সবচেয়ে বড় টার্গেট হয়েছে; কিন্তু পুরো জাতি এখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। সবচেয়ে বড় কথা, মানুষ অবশেষে আবার স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে। মিডিয়ার দিকে নজর দিন। আ’লীগের শাসনামলে এ দেশে সাংবাদিকতা কোথায় ছিল? সত্য কথা বলতে চাওয়া সাংবাদিকদের চুপ করানো হতো। এখন আমরা, সাধারণ মানুষ এবং মিডিয়া সবাই স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছি। সামগ্রিকভাবে এটা ভালো লাগছে এবং আমরা আল্লাহর রহমতের জন্য কৃতজ্ঞ।
প্রশ্ন : ৫ আগস্ট থেকে সারা দেশে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে, আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। কয়েকজন নেতাকে হত্যা করা হয়। জনতার বিচারও বাড়ছে। এসব বিষয়ে জামায়াতের অবস্থান কী?
উত্তর : প্রথমত, আমরা যেকোনো ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে। আমরা আইন হাতে তুলে নেয়ার বিরুদ্ধে। একজন মানুষের ওপরও যেন কেউ অত্যাচার করতে না পারে, সে যত বড় অপরাধীই হোক না কেন। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়াও যদি কোনো অপরাধী ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মের হয় বা অন্য দেশের নাগরিক হয় এবং অপরাধ করে তবে আইনগতভাবেই ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতন হলে সারা দেশে অন্য দলের হাতে তাদের পাঁচ লাখ নেতাকর্মী নিহত হবে। কেন তার এই ভয়? কারণ তারা তাদের অপরাধ সম্পর্কে জানে। যাই হোক, এটি কিন্তু ঘটেনি। পাঁচ লাখ নয়, ৫০ হাজারও নয়, এমনকি ৫০০ বা এমনকি পাঁচজন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়নি। এটি শুধু আমাদের প্রচেষ্টার কারণে হয়নি। এটা সম্ভব হয়েছে একমাত্র আল্লাহর রহমত এবং এ দেশের মানুষের দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে। আমাদের ওপর যে নির্যাতন করেছে আওয়ামী লীগ; জামায়াত দল হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে পারত। তবে প্রথম থেকেই আমরা আমাদের দলের নেতাকর্মী ও দেশবাসীকে আইন হাতে তুলে না নেয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছি। আমাদের প্রতিশোধ নেয়ার কোনো উদ্দেশ্য নেই।
প্রশ্ন : গত এক দশকে বিশ্বব্যাপী, অনেক স্বৈরাচারীর ক্ষমতা থেকে পতন ঘটেছে; কিন্তু তাদের দেশগুলো একনায়কত্ব-পরবর্তী অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। ফলে কেউ কেউ মনে করেন বর্তমান সময়টা বাংলাদেশের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং। এই বিষয়ে আপনার চিন্তা কী?
উত্তর : বাংলাদেশের অবস্থা অন্যান্য দেশের মতো হুবহু নাও হতে পারে, তবে কিছু মিল রয়েছে। সে জন্য আমাদের সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র দেখেছি- ব্যর্থ বিচারিক অভ্যুত্থান, সচিবালয়ে আনসার বাহিনীর দ্বারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম (সিএইচটি) এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে; কিন্তু জনগণের ঐক্য ও দেশপ্রেমের কারণে এর কোনোটিই সফল হতে পারেনি। আমি আশাবাদী যে, এই ঐক্যবোধ ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
প্রশ্ন : গত এক দশকে আ’লীগের শাসনামলে সারা দেশে জামায়াতের অফিস সিলগালা করে দেয়া হয়। দলটি বেশ কিছু বিধিনিষেধের সম্মুখীন হয়েছিল। এই পরিস্থিতির মধ্যে কিভাবে এটি তার কার্যক্রম পরিচালনা করেছে?
উত্তর : অফিস বন্ধ থাকলেও আমাদের কার্যক্রম থেমে থাকেনি। ৫০০ জনের সাথে মিটিং করার পরিবর্তে, আমরা ৫০ জনের ছোট দলে মিটিং সীমাবদ্ধভাবে করেছি। আমরা একটি নিরাপদ জায়গায় বসেছি। এটি প্রক্রিয়াটিকে আরো সময়সাপেক্ষ করে তুলেছে। কোভিডের সময় লকডাউন শুরু হওয়ার সাথে সাথে, আমরা আমাদের কার্যক্রম অনলাইনে স্থানান্তরিত করেছি। এই বছরের শুরুতে আমরা সক্রিয় রাজনীতি পুনরায় শুরু করার এবং আমাদের সামনে যত বাধাই আসুক তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিই। যাই হোক, আমাদের রাস্তায় আউটডোর মিটিং বা সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়নি।
প্রশ্ন : কেউ কেউ মনে করেন, হাসিনাবিরোধী আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি ছিল জামায়াত। অনেকে আবার দাবি করেন, কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেশ কয়েকজন মূল সমন্বয়কের জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পর্ক ছিল। এই দাবিগুলো কতটা সঠিক?
উত্তর : জামায়াত বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল। জনগণের দাবি নিয়ে আমরা বহুবার রাজপথে নেমেছি, এবারো তার ব্যতিক্রম নয়। যাই হোক, আমরা কখনোই এই আন্দোলনের মূল পরিকল্পনাকারী বলে দাবি করব না। এটা ছিল নিপীড়িত মানুষের আন্দোলন। ছাত্রসমাজ যুক্তিসঙ্গত দাবি নিয়ে এই প্রতিবাদ শুরু করে। এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের প্রতি বিগত সরকারের কঠোর প্রতিক্রিয়া এর পতন ঘটায় এবং আন্দোলনের কোনো সমন্বয়কারী জামায়াতের রাজনীতির সাথে যুক্ত কি না আমি নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। কিন্তু তারা তা হলেও, জামায়াতের অংশ হওয়া যেমন অপরাধ নয়, তেমনি জড়িত না হওয়াও অপরাধ নয়।
প্রশ্ন : অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জামায়াতের প্রত্যাশা কী? অন্যান্য প্রধান বিরোধী দল আগাম নির্বাচনের জন্য জোর দিচ্ছে, জামায়াত একই তৎপরতা দেখায়নি কেন?
উত্তর : প্রথমত, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কিছু সংস্কার প্রয়োজন। একটি অন্তর্বর্তী সরকার থেকে সব সংস্কার বাস্তবায়নের আশা করা যায় না বা তারা রাজনৈতিক সরকার নয় বলে পারেও না। তাই আমরা প্রথমে সংস্কারের রোডম্যাপ চাই, তার পর নির্বাচনের রোডম্যাপ চাই।
স্বৈরাচারী আ’লীগ শাসন দেশকে সব সেক্টরে ভঙ্গুর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে, তাই অন্তর্বর্তী সরকারের পর্যাপ্ত সময় লাগবে, কিন্তু সংস্কারের জন্য সীমাহীন সময় নয়। আমরা দ্রুতই তাদের সাথে আরো আলোচনা করব এবং একটি রোডম্যাপের অনুরোধ করব।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার দুই মাস হয়ে গেছে। জামায়াত কি তার কর্মক্ষমতা নিয়ে সন্তুষ্ট?
উত্তর : আমাদের দেশে অনেক ক্ষত আছে। একটি বড় আন্দোলনের ফলে প্রাণহানি, আহত ও রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির ক্ষতি হয়। আইন প্রয়োগকারীরা পুনরুজ্জীবিত করার জন্য লড়াই করছে এবং অর্থনীতিও ভালো অবস্থায় নেই। তার ওপরে সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ বন্যা মোকাবেলা করতে হয়েছে; যা কিছু ঘটেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে, আমি বিশ্বাস করি তারা তাদের সেরাটা করছে। অবশ্যই তারা এখনো সবার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। তবে তারা এখন পর্যন্ত যা অর্জন করতে পেরেছে, তা উপেক্ষা করা উচিত নয়।
প্রশ্ন : জামায়াত কি সাধারণ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে? নাকি অন্য কারো সাথে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে? বিভিন্ন ইসলামী গোষ্ঠী জামায়াতের সাথে মিত্রতার আগ্রহ দেখিয়েছে, যা অতীতে হয়নি।
উত্তর : জনগণের দাবির ভিত্তিতে আমরা আগেও জোট করেছি। এখন পর্যন্ত, এই নির্বাচনে অন্য দলের সাথে জোট করব কি না সে বিষয়ে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি।
প্রশ্ন : আ’লীগ শাসনামলে অনেক জামায়াত নেতাকে মুক্তিযুদ্ধের অপরাধী হিসেবে বিচার করা হয়। এই বিচারের বিষয়ে জামায়াত কেমন অনুভব করে?
উত্তর : যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। যুদ্ধোত্তর প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের সময় ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর তালিকা তৈরি করা হয়। এ তালিকায় প্রাথমিকভাবে পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল যারা যুদ্ধের সময় নৃশংসতার জন্য অভিযুক্ত ছিল। আমাদের দলের কেউ যুদ্ধাপরাধীর সেই মূল তালিকায় ছিল না। তবে ওই সময় এসব ব্যক্তির বিচার করা হয়নি। এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তারা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) প্রতিষ্ঠা করে। আইসিটি অসংখ্য ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করেছে, যাদের মধ্যে অনেকেই আমাদের রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত। এই বিচারগুলো ব্যাপকভাবে বিতর্কিত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে; আমাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ এবং গত ১৫ বছরের রায়গুলো মিথ্যার ভিত্তিতে বিচারিক হত্যাকাণ্ড ছাড়া আর কিছুই নয়।
প্রশ্ন : গোলাম আযমের বিভিন্ন বক্তৃতা ও লেখা, যিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের আমির ছিলেন, স্পষ্টতই পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের প্রতি সমর্থন দেখান। তিনি শান্তি কমিটিরও অংশ হয়েছিলেন, যেটি পাকিস্তানপন্থী নেতাদের দ্বারা স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর প্রচেষ্টাকে সহায়তা করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তা হলে কিভাবে তা মিথ্যা হয়?
উত্তর : অবশ্য তিনি শান্তি কমিটিতে ছিলেন। তিনি যদি এ কমিটির নামে সহিংসতা করেন তাহলে তার বিচারে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। তবে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগই বানোয়াট। এটিকেই আমরা বলি ‘বিচারিক হত্যা’।
১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল পাকিস্তানের নীতিনির্ধারকরা রাজনৈতিক নেতাদের সাথে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে জামায়াত কোনো গণহত্যার প্রতি সমর্থন জানায়নি। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী কোনো রাজনৈতিক দলের সম্মতি ছাড়াই গণহত্যা শুরু করেছিল।
প্রশ্ন : জামায়াত কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে?
উত্তর : অবশ্যই, আমরা করি। আর দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমরা আপসহীন।
প্রশ্ন : জামায়াত ক্ষমতায় এলে ভারতের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবে কিভাবে? ভারতে এটি ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে তারা শুধু একটি আওয়ামী সরকারের ওপর নির্ভর করতে পারে।
উত্তর : ভারত ও বাংলাদেশ দু’টি স্বাধীন দেশ এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সুসম্পর্ক থাকা স্বাভাবিক। আমরাও এ ধরনের সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। তবে উভয়পক্ষের মধ্যে সম্মান ও সমতা থাকতে হবে। আমি বিগত বছরগুলোতে ভারতের পদক্ষেপ নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না, তবে আমরা ভবিষ্যতের বিষয়ে আশাবাদী।
প্রশ্ন : সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, সোশ্যাল মিডিয়ায় #ইড়ুপড়ঃঃওহফরধ হ্যাশট্যাগ প্রবণতার সাথে বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব বেড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা কি চ্যালেঞ্জিং হবে না?
উত্তর : দেখুন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি বড় দেশ, এবং এটি দু’টি দেশ- কানাডা ও মেক্সিকো দ্বারা সীমাবদ্ধ। তারা কি কখনো অ্যান্টি-আমেরিকা হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে? না, তারা করে না। কেন? কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সাথে সম্মান ও সমতার আচরণ করে। ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তোলা প্রতিটি প্রতিবেশী দেশের দায়িত্ব। এ অঞ্চলে ভারতের প্রতি ক্রমবর্ধমান নেতিবাচক মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে, আমরা বিশ্বাস করি প্রতিবেশীদের প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রনীতির পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত।
প্রশ্ন : প্রাথমিকভাবে সরকার দুর্গাপূজার জন্য পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ (মাছ) রফতানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল, কিন্তু পরে সিদ্ধান্তটি বদলে তিন হাজার টন রফতানি করার সিদ্ধান্ত নেয়। জামায়াত এটি কিভাবে উপলব্ধি করে?
উত্তর : এ বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই। দুই প্রতিবেশী দেশের আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে যুক্ত থাকাটাই স্বাভাবিক। উপহার বিনিময় হলেও কোনো সমস্যা হওয়া উচিত নয়। যাহোক, সম্পর্ক একতরফা হওয়া উচিত নয়, যেমনটি আমরা পূর্ববর্তী সরকারের আমলে দেখেছি।
প্রশ্ন : দিন দিন এ অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য জাহির করতে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীনের মতো শক্তিশালী দেশগুলোর আগ্রহ বাড়ছে। ক্ষমতায় এলে এসব শক্তির সাথে জামায়াতের সম্পর্ক কী হবে?
উত্তর : আমাদের সংবিধান বলে যেসব গণতান্ত্রিক দেশ আমাদের বন্ধু আমরা তাদের গ্রহণ করব। একটি ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা তাদের সাথে জড়িত থাকব যারা আমাদের ভালো ডিল অফার করে। যারা আমাদের সম্মান করেন তাদের কাছ থেকেও আমরা সাহায্য চাইব। সামগ্রিকভাবে আমাদের লক্ষ্য আমাদের দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। আমরা কারো কাছে মাথা নত করব না বা পরাধীন হবো না।
প্রশ্ন : পার্বত্য চট্টগ্রামের (সিএইচটি) চ্যালেঞ্জগুলোকে জামায়াত কিভাবে দেখে এবং সেখানকার সম্প্রদায়ের সমস্যাগুলোর সমাধানের ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি কী?
উত্তর : আমরা বিশ্বাস করি যে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের সীমান্তের মধ্যে বসবাসকারী সব মানুষ সমান অধিকারের নাগরিক। তারা কোথায় থাকে তার ভিত্তিতে আমরা মানুষের মধ্যে পার্থক্য করি না। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে পরবর্তী সরকারগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাগুলোর সমাধান করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী সমাধান এখনো পাওয়া যায়নি।
জামায়াত জোর দেয় যে পার্বত্য চট্টগ্রামে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য কেবল পর্যটন উন্নয়ন করলে হবে না। জনগণকে সহায়তা করার জন্য যথাযথ হাসপাতাল, স্কুল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলো প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা পাহাড়ের মানুষ এবং সমতলের মানুষের মধ্যে একটি সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ব্যবধান স্বীকার করি, যদিও এই ব্যবধান সর্বজনীন নয়। তাদের স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এই বিভাজন দূর করার চেষ্টা করতে হবে। যদিও পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা বাংলাদেশের নাগরিক, তারা বাঙালি নয় এবং আমরা তাদের স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বজায় রাখার অধিকারকে পূর্ণ সমর্থন করি।
প্রশ্ন : সমাজে একটা ধারণা আছে যে জামায়াত ক্ষমতায় এলে তালেবানের অধীনে আফগানিস্তানের মতো বাংলাদেশও শাসিত হবে। লোকেরা ভয় পায় যে নারীরা যা চায় তা পরতে পারবে না, স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ থাকবে এবং বাংলাদেশের শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জামায়াত কি এভাবে দেশ শাসন করবে?
উত্তর : ইসলাম কাউকে অন্যের ওপর কিছু চাপানোর অধিকার দেয় না। অতএব, আমরা কারো ওপর কিছু চাপিয়ে দেবো না। উল্টো আমরা সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করব। একজন মহিলা তার পছন্দমতো পোশাক পরতে পারেন, একজন মুক্ত চিন্তাবিদ স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারেন এবং একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা তার নিজস্ব শৈলীতে চলচ্চিত্র তৈরি করতে পারেন। যাহোক, আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে সমাজের নৈতিক কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। যদিও নৈতিকতার বিষয়ে ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রায়ই দ্বন্দ্ব থাকে, আমরা আশা করি সমাজের মধ্যে এই সমস্যাগুলোর সমাধান হবে।
আর বাংলাদেশ যেমন সিদ্ধান্ত নেবে না আফগানিস্তান কিভাবে পরিচালিত হবে, তেমনি আফগানিস্তানও নির্ধারণ করবে না কিভাবে বাংলাদেশ পরিচালিত হবে। এমন চিন্তা করে লাভ নেই। আমরা আধুনিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করি এবং তা বহাল রাখব।
উৎসঃ dailynayadiganta