বঙ্কিমচন্দ্রকে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ইংরেজ প্রশ্নকর্তা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘ক্যান ইউ টেল মি হোয়াট ইজ দ্য ডিফারেন্টস বিটউইন আপড অ্যান্ড বিপড।’ বঙ্কিম বলেছিলেন, ‘বিয়িং এন ইংলিশ ইউ আর আস্কিং মি ডিফারেন্টস ইন বেঙ্গলি ওয়ার্ডস-দ্যাট ইজ দ্য আপড। অ্যান্ড দ্য ইংলিশ কনকয়ার্ড আওয়ার মাদারল্যান্ড-দ্যাট ইজ দ্য বিপড।’ তাহলে আপনারা আপদ-বিপদের পার্থক্য নিশ্চয়ই অনুভব করতে পারছেন। ৩৬ জুলাইয়ের গণবিপ্লব আমাদের জন্য গৌরবময় স্বাধীনতা এনেছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। সেই স্বাধীনতা আমাদের জন্য নিরঙ্কুশ অধিকার ও আনন্দ বয়ে এনেছে এরকম ভাবারও কোনো কারণ নেই।
এটি সত্যি কথা যে, নিরঙ্কুশ আনন্দ-বেদনা অথবা সুখ-দুঃখের অস্তিত্ব নেই। সবই মিশ্র ধরনের। রক্তাক্ত বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আমরা যেমন অবাধ স্বাধীনতা পেয়েছি, তেমনি আপদ-বিপদও হাজির করেছি। এমনিতেই এ দেশবাসীর আকৃতি-প্রকৃতি, স্বভাব-চরিত্র ও বিষয়-বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অতীতের সাক্ষ্য সুখকর নয়। অপর দিকে, হাজার বছর পর আধুনিক মন-মানসেও যে অসংখ্য পরিবর্তন ঘটেছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। জলোচ্ছ্বাসের সাথে যেমন বিশুদ্ধ জল প্রবাহিত হয় না, তার সাথে আবর্জনাও প্রবাহিত হয়। সেরকম আমাদের ৩৬ জুলাইয়ের ঘটনাবলি প্রত্যক্ষ করলে বোঝা যাবে যে, সেখানেও আপদ-বিপদ ছিল। লাখ লাখ মানুষ যখন প্রধানমন্ত্রীর অফিস কিংবা বাসভবন অধিকার করে বিজয়ের স্লোগান দিচ্ছিল ঠিক তখনই একদল মানুষ লিপ্ত হয় লুটতরাজে। এদের মধ্যে আর একদল সব কিছুকে ভাঙচুর করাকেই বীরত্বের কাজ মনে করে। আর একদল ঘটি-বাটি-থালা-লাঠি থেকে শুরু করে নিয়ন্ত্রণযন্ত্রের ভগ্নাংশও বহন করে নিয়ে যায়।
আপনারা দেখেছেন মাথায় করে টেবিল-চেয়ার, তা-ও নিয়ে গেছে। সাথে করে নিয়ে গেছে হাঁস-মুরগিও। শুধু তাই নয়, তার পালিত কুকুরটিও নিয়ে গেছে। সবচেয়ে মজার কথা, এসব করার পর তারা যার যার কুকর্মের পক্ষে যুক্তিও হাজির করেছে- এরাই হলো সেই আবর্জনা যা জলোচ্ছ্বাসের সাথে সাথে চলে আসে। যারা ভাঙচুর করেছে তাদেরও যুক্তি আছে। সঞ্চিত ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে এসব কার্যাবলি অনুমোদন করাতে চান তারা। আবার বিবেক যে একেবারেই লুপ্ত হয়েছে এমনটিও নয়। পরদিন স্বেচ্ছায় অথবা ভয়ে কিংবা লজ্জায় কিছু কিছু জিনিস ফেরত দিয়ে গেছে। তারপর যারা ভাঙচুর করেছে এমনকি দেয়াল ধসিয়ে ফেলেছে তাদের খেয়াল হয়েছে- আরে, এ তো আমাদেরই সম্পদ। তবে তাদের এই আক্ষেপে সন্ত্রাস অবদমিত হয়নি। ভাঙা দেয়ালও সংস্কার হয়নি। এগুলো ছিল প্রাথমিক আপদ-বিপদ।
গণবিপ্লব সফল হওয়ার পর খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশাসনিক শূন্যতার সৃষ্টি হয়। পুলিশ বিদ্রোহ করে। ধর্মঘট করে। এমনকি ট্রাফিক পুলিশও কেটে পড়ে। এই সুযোগে পেশাদার দুষ্কৃতকারীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। এদের সাথে যুক্ত হয় সমাজবিরোধী লোভী ও লুটপাটকারীরা। তারা আওয়ামী দুষ্কৃতকারী দমনের নামে দখল, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ ও চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়ে পড়ে। কখনো কখনো তারা কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নাম ব্যবহার করে। প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এ ধরনের কার্যকলাপ থেকে জনগণকে বিরত থাকতে আহ্বান জানায়। জামায়াতে ইসলামী একই আহ্বান জানায়। কিন্তু চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী। চুরি-ডাকাতি ও ছিনতাই-রাহাজানি বেড়ে যায়। পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় এসব দুষ্কৃতকারী হামলা চালায়। নগরবাসীকে নিজেদের সম্পদ ও সম্মান রক্ষায় পাহারা বসাতে হয়। অপর দিকে রাস্তায় স্বেচ্ছাশ্রমে সব স্তরের ছাত্রছাত্রীকে ট্রাফিকের ভ‚মিকায় দেখা যায়। আবারো সেই কথা- ভালোর সাথে মন্দ আছে, মন্দের সাথেও ভালো আছে। এই প্রথমবারের মতো নিরেট সাধারণ নাগরিকদের সরব দেখা গেল।
স্বাধীনতার নাম স্বেচ্ছাচার নয়। মনীষী রুশো বলেন, ‘ম্যান ইজ বর্ন ফ্রি, বাট এভরিহোয়ার হি ইজ ইন চেঞ্জ।’ মানুষ স্বাধীন হয়েই জন্মগ্রহণ করে কিন্তু সর্বত্রই সে শৃঙ্খলিত। এসব শৃঙ্খলা হচ্ছে আইন-কানুন, রীতি-নীতি, ভদ্রতা-সৌজন্য-সভ্যতা ইত্যাদি। ৩৬ জুলাইয়ের গণবিপ্লব আমাদের স্বাধীন করেছে। কিন্তু স্বাধীনতা আর স্বেচ্ছাচার যে এক নয়, বাংলাদেশের কিছু লোক বিপ্লব-পরবর্তীকালে তা ভুলে যায়। তারা মনে করে স্বাধীনতা মানেই অবাধ স্বাধীনতা। ‘লেইজেস ফেয়ার’। বাধা বন্ধনহীন উচ্ছৃঙ্খলতার নাম স্বাধীনতা নয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক দিনগুলোতে প্রতিদিন স্বাধীনতার জয়গান হতে থাকে। একদল লোক এই সময়কালকে দাবি-দাওয়া ও সুবিধা আদায়ের মোক্ষম সময় বলে মনে করতে থাকে। সেই চেহারা, সেই দৃশ্য দেখা যায় সচিবালয় থেকে বিদ্যালয় পর্যন্ত।
অভিযোগ আছে, লোক প্রশাসন মন্ত্রণালয়ে হাজির হয়ে একদল সুবিধাদাবিদার কর্মকর্তা ইচ্ছে মতো আদেশ, পদায়ন ও পদোন্নতি নিয়ে নেন। তারা গণবিপ্লবে দুর্বল ও সংবেদনশীল কর্মকর্তাদের দ্বারা এটি করিয়ে নেন। আরো পরে ডিসিদের পোস্টিং নিয়ে যে অঘটন ঘটে তা আমাদের নাগরিক সাধারণকে লজ্জা দিয়েছে। এখানে দুটো বিষয়- যারা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ-ডিসি। তারা কি এমন আচরণ করতে পারে? অপর দিকে কিভাবে আওয়ামী ডিসিদের একাংশ বহালতবিয়তে পদায়ন পায় তাও প্রশ্নসাপেক্ষ। শেষ খবরে জানা গেছে, অঘটন ঘটনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য প্রশংসার কাজ।
সচিবালয়, প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণ এমনকি প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন পর্যন্ত দাবি-দাওয়ার যেন প্লাবন বসে। প্রতিদিন অসংখ্য সংগঠন, সমিতি ও গোষ্ঠী এসব এলাকায় মিছিল করে করে দাবি-দাওয়া জানাতে থাকে। বিগত ১৫ বছরে যে দাবি-দাওয়া তারা ভুলে গিয়েছিলেন অথবা জানাতে পারেননি। তা সবই উত্থাপনের সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে গেলেন তারা। আপনারা দেখেছেন, চৌকিদার থেকে আনসার ও বিভিন্ন স্তরের, বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা জোট হয় কিভাবে তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ের চেষ্টা করেছেন। আনসারদের অতি বিপ্লবী কার্যক্রমে একবার অচল হয়ে পড়ে সচিবালয়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা হস্তক্ষেপ না করলে বিপদ হতে পারত।
এক কথায় বিপ্লব-পরবর্তী এক মাস ‘হরিলুটের মাস’ বলে অভিহিত করা যায়। বেকার যুবকদের আন্দোলন যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু তা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন পর্যন্ত প্রলম্বিত হতে পারে না। এটি অন্যায়। আমরা যে আর অধিকার আর অনধিকারের সীমা বুঝি না এসব ঘটনাবলিতে তাই প্রমাণিত হয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রফেসর ইউনূসের হাতে আলাদিনের চেরাগ নেই। বিগত অর্ধশতাব্দীর অনিয়ম-অন্যায়ের প্রতিকার তিনি এক দিনেই করতে পারেন না। বিশেষ করে বিগত ১৫ বছর ধরে বিকারগ্রস্ত ব্যক্তিতন্ত্র আমাদের স্বাধীনতাকে বিপর্যস্ত করেছে। ইচ্ছা করলেই তা তিনি নিমেষেই উদ্ধার করতে পারেন না। এ জন্য বাংলাদেশের নাগরিক সাধারণকে ধৈর্য, সহ্য ও সমঝোতার মনোভাব নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহায়তা করতে হবে।
পতিত ‘আমি’ স্বৈরাচার সব ক্ষেত্রেই সর্বনাশ সাধন করেছে। রাজনীতি বিপর্যস্ত হয়েছে, অর্থনীতি বিধ্বস্ত হয়েছে, সামাজিকতা বিনষ্ট হয়েছে এবং সংস্কৃতি বিকৃত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে যে ক্ষেত্রটিতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা শিক্ষা ক্ষেত্রে। আগামী ২৫ বছরেও সেই ক্ষতি পূরণ করা যাবে না। বিপ্লব-পরবর্তীকালে শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় এই সরকার। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু অতি উৎসাহী ও সুবিধাভোগী লোকজন পাইকারিভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে দখল করার চেষ্টা করে। এটি সত্যি কথা যে, আওয়ামী আমলে শিক্ষার পরিবর্তে কায়েম হয়েছে অশিক্ষা। যেসব ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের পরিবর্তন ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার রদবদল প্রয়োজন সেখানে তা করা যেতে পারে। কিন্তু তা অবশ্যই হতে হবে আইনকানুন মেনে। সংশ্লিষ্ট বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিধিবিধান রয়েছে। দুঃখের সাথে বলতে হয়, বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গায়ের জোরে পরিবর্তন আনা হয়েছে। শিক্ষকরা অপদস্ত হয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বারবার এসব না করার জন্য জনসাধারণকে আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু ফলোদয় হয়েছে খুবই কম। এসব আপদ-বিপদের মধ্য দিয়ে অস্থায়ী সরকারকে কাজ করতে হচ্ছে।
এসব আপদের পর সত্যিকার বিপদও আছে। অভিযোগ রয়েছে, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের তৎপরতা কেমন যেন দৃশ্যমান নয়। বিগত দুই মাস পর জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ বিভিন্ন পর্যায়ে লোকজনের মুখে হতাশার সুর লক্ষ করা গেছে। আওয়ামী আমলে যে সিন্ডিকেট জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া বানিয়েছে, তারা কি এখনো আছে? সিন্ডিকেটের সাথে আওয়ামী সরকারের বন্দোবস্ত ছিল বলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। কিন্তু এখন? চালের দাম বেড়েছে। প্রতিটি ভোগ্যপণ্যের দাম অচিন্তনীয়ভাবে বেড়েছে। এর জবাব কি? বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, গত মাসে মুদ্রাস্ফীতির বিপরীতে মজুরি বেড়েছে ৮ শতাংশ। এর অর্থ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আরো কমেছে। সরকারের এমন নিষ্ক্রিয়তা অগ্রহণযোগ্য।
আইনশৃঙ্খলার অবস্থাও উন্নতি হয়েছে- এমন সান্ত্বনা লাভের সুযোগ নেই। পুলিশ প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে কার্যকর হয়নি। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, থানা অথবা অন্যত্র পুলিশরা আগের মতো সক্রিয় নয়। তাদের মধ্যে আছে অপরাধী মন ও অসহায়ত্ব। পুলিশ বাহিনী তথা আইনশৃঙ্খলা এজেন্সিগুলোকে তৎপর করতে দুটো কাজ করা যায়। প্রথমত, যারা গত সময়ে মারাত্মক অপরাধ করেনি তাদের ক্ষমা করা যায়। এতে তাদের আস্থা-বিশ্বাস ফিরে আসবে। দ্বিতীয়ত, নতুন নিয়োগে যাওয়া যায়, ইতোমধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিলে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হবে। পুলিশ বাহিনীকে পুনর্গঠন করতে নতুন করে ভাবতে হবে। পুলিশ কমিশন করা যেতে পারে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জেঁকে থাকা একটি স্বৈরাচারের প্রবক্তাদের মোকাবেলা করতে হচ্ছে। দেশে কোনো কোনো জায়গায় তাদের তৎপরতা উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। বিশেষ জেলায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে তাদের দ্বারা। অন্যান্য জায়গায়ও তাদের উঁকি মারার ইঙ্গিত রয়েছে। আবার কোনো কোনো মহল তাদের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের অন্যায় আবদার করছে। বৈধতার সুযোগে তারা অবৈধভাবে বাংলাদেশকে গ্রাস করতে চাইবে। সুতরাং রাজনৈতিকভাবে, নৈতিকভাবে ও জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে তাদের চিরতরে উৎখাত করতে হবে। নইলে এই জাতির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না। আরো উদ্বেগের বিষয়, প্রতিবেশী দেশে অবস্থান করে তিনি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন। সাধারণভাবে দৃশ্যমান যে, তার এই অবস্থান বাংলাদেশের মানুষের কাছে কাঁটার মতো বিঁধে আছে। গুজব বেরোচ্ছে যে, তিনি অবশেষে ভারত ছাড়ছেন। তা সত্য হলে একটি বিব্রতকর অবস্থার অবসান ঘটবে। এটি যত শিগগিরই হবে, ততই উভয় দেশের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটবে। এসব বিপদ-আপদের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এগোতে হবে অতি সতর্কতার সাথে। কিন্তু দৃঢ় পদক্ষেপে।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়