0.1 C
Munich
Monday, December 23, 2024

এক পরিবারের ৪ জনের মরদেহ বাড়ি পৌঁছেছে, মূর্ছা যাচ্ছেন মা

জনপ্রিয় সংবাদ

পিরোজপুর সদরের কদমতলা এলাকায় প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে আটজন নিহত হন। তাদের মধ্যে একই পরিবারের চারজনের বাড়ি নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের হোগলাবুনিয়া গ্রামে।

বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় চারজনের মরদেহ হোগলাবুনিয়া গ্রামের মৃধা বাড়িতে পৌঁছালে সেখানে শোকের ছায়া নেমে আসে। তাদের মরদেহ দেখে বাবা, মা আর ভাইসহ আশপাশের মানুষের কান্নয় ভারী হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। শেষবারের মতো একনজর দেখতে আশপাশের অসংখ্য মানুষকে ওই বাড়িতে ভিড় করেন।

এ ঘটনায় নিহত আরেক পরিবারের চারজনের বাড়ি শেরপুরের সদর উপজেলার ভীমগঞ্জ গ্রামে। তাদের চারজনের মরদেহ পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের মর্গ থেকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছেন স্বজনরা।

বুধবার (০৯ অক্টোবর) রাত সোয়া ২টায় সদর উপজেলার নাজিরপুর সড়কের নুরানি গেট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুই পরিবার মিলে কুয়াকাটায় ঘুরতে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।

নিহতরা হলেন, নাজিরপুরের হোগলাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. শাওন (৩২), তার স্ত্রী আমেনা বেগম (২৫), শাওনের দুই ছেলে শাহাদাত (১০) ও আব্দুল্লাহ (৩)। শাওন দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িটির চালক ছিলেন। এছাড়া আরেক পরিবারের নিহতরা হলেন, মোতালেব (৪৫), তার স্ত্রী সাবিনা (৩৬), তাদের কন্যা সন্তান মুক্তা (১০) ও ছেলে শোয়াইব (২)। তাদের বাড়ি শেরপুরের সদর উপজেলার ভীমগঞ্জ গ্রামে।

আরও পড়ুনঃ  ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইসলামি বক্তা তাহেরীর গাড়িতে হামলা

নিহত শাওনসহ পরিবারে চারজনের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছানোর পর বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তার মা মাহিনুর বেগম। এই পরিবারের ছোট সন্তান শাওনসহ তার দুই ছেলে ও স্ত্রীকে হারিয়ে বারবার কেঁদে উঠছেন মা মাহিনুর বেগম।

নিহত শাওনের শাশুড়ি জাকিয়া বেগমও মরদেহ দেখে মূর্ছা যাচ্ছিলেন বারবার। কান্নাজড়িত কণ্ঠে জাকিয়া বেগম বলেন, আমার তো সব শেষ হয়ে গেল। হায় আমার মেয়ে আমার জামাই আমার নাতিরা সব এক সঙ্গে চলে গেল।

নিহত শাও‌নের মামাতো বোন রিমা আক্তার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ভাইয়া আমাকে ফোন করে কুয়াকাটা থেকে আমাদের বাড়িতে আসার কথা বলেছিলেন। তখন তার সঙ্গে ভাবি ও ভাইয়ার বন্ধুসহ আটজনের খাবার রান্না করি। আমরা খাবার রান্না করে রাত আড়াইটা পর্যন্ত অপেক্ষা করি। ভাই আর আসে না। এখন আসছে সবাই লাশ হয়ে।

আরও পড়ুনঃ  বিএনপির সমাবেশে হাজির ছাত্রহত্যা মামলার আসামি আ.লীগ নেতা

নিহত শাওনের বড় ভাই জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা তিন ভাই এক বোন। শাওন আমাদের সবার ছোট। সে আর্মিদের সিভিল বিভাগের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানে (সিএসডি) কাজ করতেন। দুই সন্তান নিয়ে আমার ভাই সুখে শান্তিতে ছিল। একটি সড়ক দুর্ঘটনা সব শেষ করে দিয়েছে।

হোগলাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, একই পরিবারের চারজনের মৃত্যুর খবর শুনে মহল্লায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এ ঘটনা খুবই বেদনাদায়ক।

নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে আসেন দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীর ছেলে শামীম সাইদী। তিনি বলেন, অত্যন্ত মর্মান্তিক একটি ঘটনা। দুটি পরিবারের তাজা আটটি প্রাণ একই সড়ক দুর্ঘটনায় চলে গেলো। আমাদের সকলেরই সতর্ক হওয়া উচিত যিনি চালক আর যিনি যাত্রী সকলকেই সচেতন হতে হবে। আমি শোকাহত পরিবারকে সমবেদনা জানাচ্ছি।

আরও পড়ুনঃ  ময়মনসিংহে আবাসিক হোটেল থেকে নারীসহ ৩১ জন আটক

পিরোজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. মুকিত হাসান খান বলেন, পিরোজপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পরিবারের আটজনের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কী কারণে এ দুর্ঘটনা হয়েছে তা বিস্তারিত জানা যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে চালকের অসতর্কতার কিংবা ঘুমিয়ে পড়ার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

উল্লেখ্য, বুধবার (০৯ অক্টোবর) দিনগত রাত ২টার দিকে পিরোজপুর সদর উপজেলার নাজিরপুর সড়কের নুরানি গেট এলাকায় দুর্ঘটনায় কবলিত হয়ে খালে পড়ে যায় প্রাইভেটকারটি। রাত সোয়া ২টায় এ খবর পেয়ে পিরোজপুর ফায়ার স্টেশনের একটি ইউনিট রাত আড়াইটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যে আরও একটি ইউনিট সেখানে গিয়ে যুক্ত হয়। একে একে গাড়িতে থাকা মোট ৮টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

সর্বশেষ সংবাদ